গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ( Guliakhali Sea Beach ) বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় নদীর মোহনায় অবস্থিত। এটি মুরাদপুর সৈকত নামেও পরিচিত। গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত এটি সীতাকুণ্ডের সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। সমুদ্র সৈকতটিকে পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে সরকার। উপকূলীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৫৯ দশমিক ১০ একর জায়গা এই ঘোষণার আওতায় থাকবে।
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত - Guliakhali Sea Beach
সৈকতটি এখনো সরকারী ভাবে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেনি। তবে বর্তমানে প্রচন্ড মানুষের সমাগম হয়। যা স্থানীয় মানুষদের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। আগে সৈকতে বোট ভাড়া/গাড়ি পার্কিং এর কোন সু-ব্যবস্থা ছিল না। সাম্প্রতিক কালে কতৃপক্ষ তা বেঁধে দিয়েছেন। তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ না থাকায় রাতে সৈকতটি নিরাপদ নয়। প্রকৃতি ও গঠনগত দিক থেকে এটি অন্যান্য সমুদ্র সৈকত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এর একদিকে দিগন্ত জোড়া জলরাশি, অন্যদিকে কেওড়া বন দেখা যায়। কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের চারদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল দেখা যায়।
এই বন সমুদ্রের অনেকটা গভীর পর্যন্ত চলে গেছে। এর পরিবেশ সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মত। সৈকত জুড়ে সবুজ গালিচার বিস্তীর্ণ ঘাস একে অন্যান্য সমুদ্র সৈকত থেকে করেছে অন্যন্য। এই সবুজের মাঝ দিয়েে এঁকে বেঁকে গেছে সরু নালা। নালাগুলো জোয়ারের সময় পানিতে ভরে উঠে। পাখি, ঢেউ আর বাতাসের মিতালীর অনন্য অবস্থান দেখা যায় এই সমুদ্র সৈকতে। এই সৈকতটিতে আগে মানুষের সমাগম হতো না। কারণ এটির সম্পর্কে ওতো বেশি জানতো না। ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কিছু ছাত্র ঘুরতে এসে তা ফেসবুক, ইউটিউবে আপলোড করেন। এরপরই সৈকতটির ব্যাপারে সবাই জানতে পারেন। বর্তমানে এখানে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়।
গুলিয়াখালি সি বিচ যাওয়ার উপযুক্ত সময়
বর্ষাকালে যাওয়াই উত্তম, তবে বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়ে ও যেতে পারেন কিন্তু সব থেকে বেশি সবুজের সমারহের চাদরে মোড়া সমুদ্র সৈকত দেখতে হলে বর্ষাকালে যাওয়াটা উত্তম। তবে বর্ষাকালে কিছু বিপদ থাকে যেমন হঠাৎ বৃষ্টি চলে আস্তে পারে। আর যদি বৃষ্টিকে আলিঙ্গন করে ঘুর আসতে চান সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়া সি বিচ তবে বর্ষাকাল ই উত্তম। তখন আশেপাশের পরিবেশ মিলিয়ে একটু বেশি সুন্দর মনে হয় এই বিচ কে।
কিভাবে যাবেন
যেখান থেকেই যান আপনাকে প্রথমেই যেতে হবে চট্রগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার সীতাকুণ্ড বাজারে। ঢাকা থেকে গেলে চট্রগ্রাম গামী যে কোন বাসে করে যেতে পারবেন। এই জন্যে আপনাকে সিতাকুণ্ড বাজারে নেমে যেতে হবে। ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড বাস ভাড়া মানভেদে ৬০০-১২০০টাকা।
ট্রেন
ঢাকা থেকে চাইলে ট্রেনে করেও যেতে পারবেন (ভাড়া মানভেদে ২৩০-৬০০টাকা)। এইক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় ফেনীতে নেমে গেলে। ফেনী স্টেশন থেকে লোকাল বাসে করে সিতাকুণ্ড বাজারে চলে আসতে পারবেন।
চট্রগ্রাম থেকে
চট্রগ্রামের অলংকার মোড় থেকেও বাসে করে সীতাকুণ্ড আসা যায়। চট্টগ্রাম থেকে ১৫০ টাকা ভাড়ায় চয়েসে বাসে যেতে পারেন।
গুলিয়াখালি সি বিচ কভার করতে কত সময় লাগতে পারে
আপনাদের ভালোভাবে সি বিচ কভার করতে ২/৩ ঘন্টা সময় লাগবে। তবে টিমের সবার উপর নির্ভর করে সময় একটু কম বেশি লাগতে পারে। কারণ সবার হাঁটা চলা এক রকম নয়।
কোথায় থাকবেন
এই ভ্রমণ একদিনের তাই থাকার দরকার পড়বেনা তবু নিতান্তই রাতে থাকতে চাইলে মীরসরাই বা সীতাকুন্ডে নিন্মমানের হোটেল পাবেন। সীতাকুণ্ড বাজার গেলে সেখানে হোটেল সাইমুন ও সাউদিয়া আছে। ভালো হোটেলে থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম চলে আসতে হবে।
ভ্রমণে সতর্কতা ও কিছু পরামর্শ
- নোংরা বা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকবেন।
- আবহাওয়া খারাপ দেখলে আপনাকে অতিরিক্ত সাবধান হতে হবে না হলে অনেক সময় আটকে পড়তে পারেন।
- সাথে পাওয়ার ব্যাংক, টর্চ লাইট রাখুন।
- সাতার না জানলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট নিতে পারেন।
- চট্টগ্রাম কিন্তু ম্যালেরিয়াপ্রবণ একটি এলাকা। সাধারণত ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকাতে যাওয়ার আগে সতর্কতা হিসেবে যাত্রা শুরুর আগের ১ সপ্তাহ থেকে যাত্রা শেষ হবার পর ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ডক্সিসাইক্লিন ট্যাবলেট (১০০মি.গ্রা.) খেতে হয়। তারপরও পাহাড়ী এলাকাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে যাবেন।
- এখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক সব সময় কাজ করেনা।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থানঃ
২। কমলদহ ট্রেইল
সুন্দর সুন্দর আকর্ষনীয় ভ্রমণ ভিডিও দেখতে আমাদের World Travel Bangladesh চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে বেল বাটনটি প্রেস করে রাখুন।