Napittachora Waterfalls

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা ( Napittachora Waterfalls ) দেশের ঝর্ণা গুলোর মধ্যে জনপ্রিয় একটি ট্রেইল। নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা ( Napittachora Waterfall ) বর্তমানে পর্যটকদের কাছে এডভেঞ্চার মূলক জনপ্রিয় একটি ঝর্ণা। এখানে আসলেই পেয়ে যাবেন, ঝর্ণার পানি সবুজ অরণ্য বেষ্টিত পাহাড়ের গায়ে আছড়ে পড়ার অনুভূতি।

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা – Napittachora Waterfalls

এই ঝর্ণা দেখতে গেলে  এখানে পেয়ে যাবেন আরো অনেক গুলো ঝর্ণা। সেগুলো হলো

১. নয়দুয়ারি বা উঠান বা টিপরা ঝর্ণা এই তিনটি নামেই পরিচিতি লাভ করেছে এই ঝর্নাটি, আবার উঠান ঝর্ণা যাকে অনেকেই নাপিত্তাছড়া ঝর্ণাও বলে থাকে।

২. কুপিকাটাখুম ঝর্ণা যা উঠান ঝর্ণার উপরের স্টেপ,

৩. বাঘবিয়ানি/মিঠাছড়ি ঝর্ণা,

৪. নাপিত্তাছড়া বা বান্দরখুম ঝর্ণা, বান্দরখুম ঝর্ণাকেই মূলত বলা হয়ে ঠাকে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা।

এই সকল ঝর্ণা গুলোতে যেতে যে ঝিরিপথ পাড়ি দিতে হয় তাকেই নাপিত্তাছড়া ট্রেইল বলা হয়ে থাকে।

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণার অবস্থান

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা বাংলাদেশের চট্রগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার নয়দুয়ারি বাজারের পূর্ব সাইডে পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত। নয়দুয়ারি বাজার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত।

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা যাওয়ার উপযুক্ত সময়

বর্ষাকালে যাওয়াই উত্তম, তবে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় সব সময়ই কম বেশি পানির প্রবাহ থাকে কিন্তু সব থেকে বেশি থাকে বর্ষাকালে। তবে বর্ষাকালে কিছু বিপদ থাকে। তাই সব থেকে ভালো হয় মাঝ বর্ষায় না গিয়ে বর্ষার আগ মহুর্তে বা পর পরই যাওয়া। সেপ্টম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর মাসে গেলে সুন্দর ভিউ পাবেন। তখন আশেপাশের পরিবেশ মিলিয়ে একটু বেশি সুন্দর মনে হয় নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা কে।

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা কিভাবে যাবেন

বাংলাদেশের যেকোন জায়গায় থেকে চট্টগ্রামের মিরসরাই এর নয়দুয়ারি বাজার যেতে হবে। বাসে চট্টগ্রাম গেলে আপনি যাত্রার সময়ই সহজে মিরসরাই এর নয়দুয়ারি বাজার নেমে যেতে পারবেন। যদি বাসের ড্রাইভার নয়দুয়ারি না চেনে তবে মীরসরাই বাজারে নেমে সিএনজি করে নদুয়ার হাট যেতে পারবেন। জনপ্রতি ১০টাকা নেবে লোকাল সিএনজি। কিন্তু আপনি যদি ট্রেনে করে চিটাগাং শহরে নামেন, তাহলে আবার বাসে করে প্রায় দেড় ঘন্টার উল্টা জার্নি করে আপনাকে মিরসরাই আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাস ভাড়া নন এসি ৪৮০ টাকা, এসি ৮০০/১১০০ টাকা।

অথবা  বাংলাদেশের যেকোন জায়গায় থেকে বাস বা ট্রেন আসতে পারেন ফেনী। ঢাকা থেকে ফেনী বাস ভাড়া ২৮০ টাকা। পরে সেখান থেকে চট্টগ্রাম গামী লোকাল বাসে উঠে যাবেন। মিরসরাই এর নয়দুয়ারী বাজারে। ভাড়া ৩০/৪০ টাকা।

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা যেতে কি গাইডের প্রয়োজন আছে

যারা খুব সৌখিন বা টাকার সমস্যা নেই তারা চাইলে নয়দুয়ারী বাজার থেকে পুরা ট্রেইল ঘুরে দেখার জন্য স্থানীয় একজন গাইড নিয়ে নিবেন। গাইড ভাড়া দরদাম করে নিবেন। ২০০/৩০০ টাকার মতো নিতে পারে। তবে ট্রেইল সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে গাইড না নিলেও চলে। স্থানীয় কাউকে জিজ্ঞেস করলেই পথ দেখিয়ে দিবে। যদি একেবারেই ধারণা না থাকে, আর পুরা ট্রেইল কভার করতে চান তবে একজন গাইড নিয়ে নেয়াটাই ভালো বা World Travel BD এর ইউটিউব ভিডিও দেখে নিতে পারেন তবে রাস্তাঘাট চেনা সহজ হবে।

তারপরও একটু ধারণা দিচ্ছি আপনাদেরকে- নয়দুয়ারি বাজার এর পূর্ব পাশে পাহাড়ের দিকে একটা রাস্তা চলে গেছে। ওই রাস্তা দিয়ে হাঁটা শুরু করবেন। কিছুক্ষন হাঁটলে রেললাইন পাওয়া যাবে। রেললাইন ক্রস করে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই নাপিত্তাছড়া পাড়া পাওয়া যাবে। এখান থেকেই ঝিরি এবং পাহাড়ি পথে ট্রেকিং শুরু হবে।

ট্রেইল শুরুর স্থানে বেশ কিছু খাবারের হোটেল আছে। ট্রেকিং শুরুর পূর্বে এখানে দুপুরের খাবারের অর্ডার করে গেলে তারা ফ্রিতে ব্যাগ রাখতে দেয়। আর অর্ডার না করেও প্রতি ব্যাগ ২০ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে রাখতে পারবেন। মোবাইল, ক্যামেরা, টাকা পয়সা সাথে নিয়ে বাকি সব কিছুই এখানে রেখে যেতে পারেন। তাহলে হাটতে সুবিধা হবে।

হোটেলের কাছে বাসের লাঠি ভাড়া পাওয়া যায়। ২০ টাকা নিবে। ফেরত দিলে ১০ টাকা রিটার্ন দিবে। ভালো দেখে একটা অবশ্যই নিয়ে নিবেন। লাঠি হাঁটার সময় বেশ কাজে দেয়।

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা কভার করতে কত সময় লাগতে পারে

আপনাদের ভালোভাবে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা কভার করতে ৪/৫ ঘন্টা সময় লাগবে। তবে টিমের সবার হাঁটার শক্তির উপর নির্ভর করে সময় একটু কম বেশি লাগতে পারে। কারণ সবার হাঁটা চলা এক রকম নয়।

কোথায় থাকবেন

এই ভ্রমণ একদিনের তাই থাকার দরকার পড়বেনা তবু নিতান্তই রাতে থাকতে চাইলে মীরসরাই বা সীতাকুন্ডে নিন্মমানের হোটেল পাবেন। সীতাকুণ্ড বাজার গেলে সেখানে হোটেল সাইমুন আছে। ভালো হোটেলে থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম চলে আসতে হবে।

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা ভ্রমণে সতর্কতা ও কিছু পরামর্শ

  • নোংরা বা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকবেন।

  • আবহাওয়া খারাপ দেখলে আপনাকে অতিরিক্ত সাবধান হতে হবে না হলে অনেক সময় আটকে পড়তে পারেন।

  • অনেক সময় আটকে পড়া লাগতে পারে উপরে বৃষ্টি হলে। সুতরাং সকাল সকাল উপরে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

  • ভালো মানের গ্রিপের জুতা পরে যাবেন।

  • ঝর্ণায় যাওয়ার সময় সর্তক হয়ে পথ চলতে হবে কারন রাস্তা বেশ কঠিন এবং পিচ্ছিল।

  • সাথে লবন নিয়ে আসুন কারন পানিতে জোঁক থাকতে পারে। জোঁক লাগলে ছাড়ানোর জন্য কাজে আসবে।

  • জোক থেকে বাঁচতে ঘাস এড়িয়ে চলুন।

  • সাথে পাওয়ার ব্যাংক, টর্চ লাইট রাখুন।

  • পাহাড়ি রাস্তা তাই কিছু ঔষধ সঙ্গে নিতে পারেন। ব্যান্ডেজ ও ডেটল জাতীয় এন্টিসেপটিক ও নিতে পারেন, কেটে বা ছিলে গেলে কাজে আসবে।

  • যেহেতু পাহাড়ে যাচ্ছেন ট্র্যাক করতে হবে, তাই দড়ি নিতে পারলে ভাল।

  • সাতার না জানলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট নিতে পারেন।

  • চট্টগ্রাম কিন্তু ম্যালেরিয়াপ্রবণ একটি এলাকা। সাধারণত ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকাতে যাওয়ার আগে সতর্কতা হিসেবে যাত্রা শুরুর আগের ১ সপ্তাহ থেকে যাত্রা শেষ হবার পর ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ডক্সিসাইক্লিন ট্যাবলেট (১০০মি.গ্রা.) খেতে হয়। তারপরও পাহাড়ী এলাকাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে যাবেন।

  • এখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক সব সময় কাজ করেনা।cry

Share this post