komoldoho Trail

সীতাকুন্ডের পরিচিত ঝর্ণা গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কমলদহ ট্রেইলের (komoldoho Trail) ঝর্ণা গুলো। কমলদহ ঝর্ণার (Komoldoho Jhorna) ট্রেইল মোটামুটি অপরিচিত একটা ট্রেইল। অসাধারন এই ট্রেইলে বড় কমলদহ ঝর্ণা আছে। বড় কমলদহ ঝরনার আপস্ট্রিমে আবার আছে ৪-৫ টা বড় এবং মাঝারি ঝর্ণা পাবেন আপস্ট্রিমে এ অনেকদুর এগুলে ডানে বায়ে ঝিরি পথ ভাগ হয়ে গেছে। ঝিরি পথ দিয়ে আগালেই দেখা মিলবে ছোট বড় ঝর্ণা আর ক্যাসকেডের। এরমধ্যে বামে অনেকদুর এগুলে পাবেন ছাগল কান্দা ঝর্ণা যার উচ্চতা প্রায় ১২০ ফুট ।

কমলদহ ট্রেইল - Komoldoho Trail

বড় কমলদহ ঝর্ণার আপস্ট্রিম বর্ষাকালে খুবই বিপদজনক তাই বড় ট্রেইলে বর্ষার শেষের দিকে যাওয়াটাই ভালো । বড় কমলদহ অল্প সময়ে কমলদহ ট্রেইলের ঝর্ণা গুলোর মধ্যকার সহজ ও খুবই অল্প সময়ে দেখে আসা যায় বলে ভ্রমণপিয়াসু মানুষের কাছে জনপ্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে।

কমলদহ ট্রেইল যাওয়ার উপযুক্ত সময়

বর্ষাকালে যাওয়াই উত্তম, তবে নাপিত্তাছড়া ট্রেইল এর ঝর্ণা গুলোতে সব সময়ই কম বেশি পানির প্রবাহ থাকে কিন্তু সব থেকে বেশি থাকে বর্ষাকালে। তবে বর্ষাকালে কিছু বিপদ থাকে। তাই সব থেকে ভালো হয় মাঝ বর্ষায় না গিয়ে বর্ষার আগ মহুর্তে বা পর পরই যাওয়া। সেপ্টম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর মাসে গেলে সুন্দর ভিউ পাবেন। তখন আশেপাশের পরিবেশ মিলিয়ে একটু বেশি সুন্দর মনে হয় এই ট্রেইল কে।

কিভাবে যাবেন

যেখান থেকেই যান আপনাকে প্রথমেই যেতে হবে চট্রগ্রাম জেলার  সীতাকুণ্ড  উপজেলার বড় দারোগাহাট বাজারে। ঢাকা থেকে গেলে চট্রগ্রাম গামী যে কোন বাসে করে যেতে পারবেন। এই জন্যে আপনাকে বড় দারোগাহাট নেমে যেতে হবে। ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড বাস ভাড়া মানভেদে ৪০০-১২০০টাকা।

ট্রেন

ঢাকা থেকে চাইলে ট্রেনে করেও যেতে পারবেন (ভাড়া মানভেদে ২৩০-৬০০টাকা)। এইক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় ফেনীতে নেমে গেলে। ফেনী স্টেশন থেকে লোকাল বাসে করে বড় দারোগাহাট বাজারে চলে আসতে পারবেন।

চট্রগ্রাম থেকে

চট্রগ্রামের অলংকার মোড় থেকেও বাসে করে সীতাকুণ্ড আসা যায়। চট্টগ্রাম থেকে ১০০ টাকা ভাড়ায় চয়েসে বাসে যেতে পারেন।

বড় দারোগার হাট থেকে উত্তর দিকে মহা সড়ক ধরে ( ঢাকার দিকে) আসলে প্রথমে ইট খোলা পরবে। ইট খোলাটি পার হয়ে হাতের ডানের ১ম মাটির রাস্তা ধরে আগাতে হবে । রাস্তা ধরে কিছু দূর গিয়ে ঝিরিতে নেমে ঝিরি ধরে ২০ মিনিটের মত গেলে ঝিরির বাম পাশে পড়বে রূপসী ঝর্ণা তবে এটা বর্ষা ছাড়া অন্য সময়ে পানি থাকেনা এবং ঝিরি মুখে পড়বে কমলদহ ঝর্ণা এটাকে বড় কমলদহ ঝর্ণা ও বলা হয়ে থাকে। মূলত এটি একটি ক্যাসকেড। ৩ ধাপের এ ঝর্ণা নিচ থেকে মাত্র ১ ধাপ দেখা যায়। বাকি ২ ধাপ দেখতে হলে আপনাকে ঝর্ণা বেয়ে উপরে উঠতে হবে। উপরে উঠার অনেক সাবধানতা অবলম্বল করতে হবে। অনেক পিচ্ছিল, একটু অসর্তক হলে, পড়ে হাত – পা ভাঙ্গার সাথে মৃত্যুর ভয়ও থাকে।

কমলদহ ঝর্ণার উপরে উঠে ছোট একটি ক্যাসকেড পার হয়ে ঝিরি পথে কিছুটা এগিয়ে গেলে সামনে দেখতে পাবেন ঝিরিপথ দুভাগ হয়ে ডান ও বাম দিকে চলে গেছে। প্রথমে হাতের বাম দিকের ঝিরি পথ ধরে এগিয়ে যান। এই ঝিরিপথে গেলে কিছুটা দূর গেলে আবারো হাতের ডানদিকে আরেকটি ঝিরি পথ পাবেন (এইটায় এখোনি যাবেন না)। সোজা ঝিরিপথে একটু এগুলেই ছাগলকান্দা ঝর্ণা দেখতে পাবেন (এটার উপরে উঠতে চাইলে পাশের পাহাড়ে দিয়ে উঠার রাস্তা খুঁজে নিন)। ছাগলকান্দা ঝর্ণা দেখে ফিরার সময় হাতের ডানের ঝিরি কথা বলছিলাম এখন এই ঝিরিপথে এগিয়ে যান।

সামনে একটা ক্যাসকেড পাবেন, ক্যাসকেডের পাশ দিয়ে খুব সাবধানে ক্যাসকেডের উপরে উঠে যান। সামনে আবারো দুটি ঝিরিপথ পাবেন আর দু ঝিরিপথের শেষে আছে দুটি সুন্দর ঝর্ণা। ঐখান থেকে ফিরে আসুন কমলদহ ঝর্ণার কাছে যেখানে প্রথম ঝিরিপথ দুভাগ হয়ে ছিল।

এবার ঝিরি পথে এগিয়ে একটি ঝর্ণা পাবেন। এই ঝর্নার পাশের পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে উপরে উঠে ঝিরিপথ পাবেন, আরেকটু এগিয়ে আরেকটি ক্যাসকেড পাবেন। ক্যাসকেডের উপরে উঠে ঝিরিপথে একটু সামনে একটি ছোট ঝর্ণার দেখা পাবেন। এখানে না থেমে ছোট ঝর্ণাটির পাথর বেয়ে উপরে উঠলে মনে হবে আপনি অন্ধকার কোন সুরঙ্গে আছেন। হাল না ছেড়ে ২মিনিট হাটা পরই পাথরভাঙ্গা ঝর্ণার দেখা পাবেন।

পাথরভাঙ্গা ঝর্ণার দেখে ব্যাক করে ছোট ঝর্ণার পর ক্যাসকেড পার হওয়ার একটু পরই হাতের বাম দিকে পাহাড়ে উঠার একটি ছোট রাস্তা দেখতে পাবেন। ( মনে রাখবেন যখন পাথরভাঙ্গা ঝর্ণা দেখতে গিয়েছিলেন তখন হাতের ডান দিকে ছিল পাহাড়ি রাস্তাটি)

পাহাড়ে উঠে দেখতে পাবেন রাস্তা আবারো দুভাগ হয়ে গেছে। তখন পাহাড়ের উপরেরর দিকে যেই রাস্তা গেছে ঐ রাস্তায় এগিয়ে যান। কিছুটা এগিয়ে গেলেই তুলনামূলক বড় রাস্তায় তিন মোড়ে এসে পড়বেন। তখন হাতের ডান দিকের রাস্তা ধরে এগিয়ে যাবেন। একটু সামনেই ঝরঝরি ঝর্ণা দেখতে পাবেন।

সামনে এগিয়ে গেলে পাবেন পাকা রাস্তা। এই পাকা রাস্তা দিয়ে নায়নআশ্রম, ফরেস্ট অফিস হয়ে সোজা বড়দারোগারহাট স্টেশনে আসতে পারবেন।

কমলদহ ট্রেইল কভার করতে কত সময় লাগতে পারে

আপনাদের ভালোভাবে কমলদহ ট্রেইল কভার করতে পুরো ১ দিন সময় লাগবে। তবে টিমের সবার হাঁটার শক্তির উপর নির্ভর করে সময় একটু কম বেশি লাগতে পারে। কারণ সবার হাঁটা চলা এক রকম নয়।

কোথায় থাকবেন

এই ভ্রমণ একদিনের তাই থাকার দরকার পড়বেনা তবু নিতান্তই রাতে থাকতে চাইলে মীরসরাই বা সীতাকুন্ডে নিন্মমানের হোটেল পাবেন। সীতাকুণ্ড বাজার গেলে সেখানে হোটেল সাইমুন ও সাউদিয়া আছে। ভালো হোটেলে থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম চলে আসতে হবে।

কমলদহ ট্রেইল ভ্রমণে সতর্কতা ও কিছু পরামর্শ

  • নোংরা বা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকবেন।

  • আবহাওয়া খারাপ দেখলে আপনাকে অতিরিক্ত সাবধান হতে হবে না হলে অনেক সময় আটকে পড়তে পারেন।
  • অনেক সময় আটকে পড়া লাগতে পারে উপরে বৃষ্টি হলে। সুতরাং সকাল সকাল উপরে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • ভালো মানের গ্রিপের জুতা পরে যাবেন।
  • ঝর্ণায় যাওয়ার সময় সর্তক হয়ে পথ চলতে হবে কারন রাস্তা বেশ কঠিন এবং পিচ্ছিল।
  • সাথে লবন নিয়ে আসুন কারন পানিতে জোঁক থাকতে পারে। জোঁক লাগলে ছাড়ানোর জন্য কাজে আসবে।
  • জোক থেকে বাঁচতে ঘাস এড়িয়ে চলুন।
  • সাথে পাওয়ার ব্যাংক, টর্চ লাইট রাখুন।
  • পাহাড়ি রাস্তা তাই কিছু ঔষধ সঙ্গে নিতে পারেন। ব্যান্ডেজ ও ডেটল জাতীয় এন্টিসেপটিক ও নিতে পারেন, কেটে বা ছিলে গেলে কাজে আসবে।
  • যেহেতু পাহাড়ে যাচ্ছেন ট্র্যাক করতে হবে, তাই দড়ি নিতে পারলে ভাল।
  • সাতার না জানলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট নিতে পারেন।
  • চট্টগ্রাম কিন্তু ম্যালেরিয়াপ্রবণ একটি এলাকা। সাধারণত ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকাতে যাওয়ার আগে সতর্কতা হিসেবে যাত্রা শুরুর আগের ১ সপ্তাহ থেকে যাত্রা শেষ হবার পর ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ডক্সিসাইক্লিন ট্যাবলেট (১০০মি.গ্রা.) খেতে হয়। তারপরও পাহাড়ী এলাকাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে যাবেন।
  • এখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক সব সময় কাজ করেনা।cry

Share this post