একই সাথে আপনি কি ঝর্না, পাহাড় এবং ফুলের রাজ্যে হারাতে চান? তাহলে ঘুরে আসতে পারেন সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক ( Sitakunda Eco Park ) থেকে। যেখানে আকাশ ছোয়া পাহাড় বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণার সাথে সবুজের ছোঁয়ায় মিশে রয়েছে প্রকৃতির সব রং। চারদিকে সবুজরে সমারোহ আর এই সবুজের সমারোহের মাঝে দেখা মিলবে প্রায় ১৫০ প্রজাতির ফুলের সাথে, যা আপনার প্রেমিক মনকে নাড়িয়ে তুলবে অতি সহজে। এই সব কিছু মিলে সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক আপনার ভ্রমন কে করে তুলবে আরো রোমাঞ্চকর।
সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন – Sitakunda Eco Park & Botanical Garden
চলুন জেনে আসি সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক সম্পর্কে।
বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকো–পার্ক, সীতাকুণ্ড বাংলাদেশের চট্রগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত একটি ইকোপার্ক। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে ১৯৯৮ সালে এই বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। ৮০৮.০০ হেক্টর জমি নিয়ে এই বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যটি গঠিত। ১৯৯৬ একরের পার্কটি দুই অংশে বিভক্ত। ১,০০০ একর জায়গায় বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ৯৯৬ একরজায়গা জুড়ে ইকোপার্ক এলাকা। জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এবং পর্যটকদের বিনোদনের জন্য বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা পার্কটিতে রয়েছে বিরল প্রজাতির গাছপালা, হাজারো রকমের নজরকাড়া ফুলের গাছ, কৃত্রিম লেক ও নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র্য। রয়েছে সুপ্তধারা ও সহস্রধারা ঝর্ণা সহ ঝিরিপথের ছোট-বড় বেশ কয়েকটি ঝর্ণা, পিকনিক স্পট, বিশ্রামের ছাউনি।
ঐতিহাসিক চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে বাংলাদেশের প্রথম এবং এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম এ ইকোপার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনটির অবস্থান।যার মূল ফটক পেরিয়ে একটু এগোলেই রয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিস্তম্ভ। কবি এসেছিলেন পাহাড়ের এ জনপদে যার বিস্তারিত স্তম্ভটির পাশে সাঁটানো সাইনবোর্ডে লেখা আছে। এর থেকে কিছুদূর সামনে গেলেই মানচিত্রে নির্দেশিত রয়েছে পার্কটির দর্শনীয় স্থান।
এখানে নির্দেশিত পথ ধরে দেড় কিলোমিটার এগোলে সুপ্তধারা ঝর্ণার সাইনবোর্ড ‘সুপ্তধারা ঘুমিয়ে পড়ি জেগে উঠি বরষায়’। এরপর প্রায় এক কিলোমিটার পাহাড়ি ট্রেইল পেরিয়ে দেখা পাওয়া যায় ‘সুপ্তধারা’ ঝর্ণার। আবার ১ কিলোমিটার গেলেই দেখা মিলবে সহস্রধারা ঝর্ণার সাইনবোর্ড। পিকনিক স্পট, ওয়াচ টাওয়ার, হিম চত্বর যার দেখা মিলবে এই ১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে গেলেই। এখান থেকে আরো চোখে পড়বে দূরের সমুদ্রের রূপ। সহস্রধারা ঝর্ণা দেখে এসে বোটানিকাল গার্ডেনের উত্তরে গেলে চোখে পড়বে পাহাড় আর পাহাড়। সহস্র ধারা ও সুপ্তধারা ঝর্ণা থেকে বহমান জলকে কৃত্রিম বাঁধ তৈরির মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে কৃত্রিম হ্রদ।
চন্দ্রনাথ মন্দির সীতাকুন্ড ইকো পার্কটির মূল আকর্ষণ। এই আকর্ষণীয় চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির টি দেখতে টিকেট কাউন্টার থেকে ৫ কিলোমিটারের পথ গাড়ী ভাড়া করে বা পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়। মন্দিরের নিচে থেকে আপনাকে পাহাড়ি পথের খাড়া সিঁড়িটি বেয়ে উঠলেই মিলবে দেখা উক্ত মন্দিরের। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজায় মগ্ন থাকেন এখানে। ফাল্গুনে শিবসংক্রান্তি পূজার সময় দেশ বিদেশের বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীদের কীর্তনে মুখর হয়ে ওঠে পুরো চন্দ্রনাথ।
সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক উদ্ভিদ বৈচিত্র
সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক এ চোখ পড়বে পাহাড়ে জন্মানো বিভিন্ন প্রজাতির ফুল। সীতাকুণ্ড ইকো পার্কে রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রকার গোলাপ আরো রয়েছে দুর্লভ কালো গোলাপ, জবা, পদ্ম, নাইট কুইন, স্থলপদ্ম, রঙ্গন, নাগবল্লী, রাধাচূঁড়া, কাঠমালতী, কামিনী, অলকানন্দা, হাসনাহেনা, বাগানবিলাস, গন্ধরাজ, ফনিকা মিলে ১৫০ জাতের ফুল রয়েছে।
সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক জীববৈচিত্র্য:
বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আর বন্যপ্রাণীর পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে দেখতে পাওয়া যায় এই সীতাকুন্ড ইকো পার্কে। পার্কটিতে রয়েছে বানর, মায়া হরিণ, হনুমান, সজারু, শূকর, মেছোবাঘ, বনরুই, ভালুক ও বনমোরগ। এছাড়াও আছে গোখরা, দাঁড়াশ, কালন্তি, লাউডগাসহ নানা প্রজাতির সাপ ও জলজ প্রাণী।
সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক ভ্রমণে সতর্কতা ও কিছু পরামর্শ
-
নোংরা বা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকবেন।
-
আবহাওয়া খারাপ দেখলে আপনাকে অতিরিক্ত সাবধান হতে হবে না হলে অনেক সময় আটকে পড়তে পারেন।
-
অনেক সময় আটকে পড়া লাগতে পারে উপরে বৃষ্টি হলে। সুতরাং সকাল সকাল উপরে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
-
ভালো মানের গ্রিপের জুতা পরে যাবেন।
-
ঝর্ণায় যাওয়ার সময় সর্তক হয়ে পথ চলতে হবে কারন রাস্তা বেশ কঠিন এবং পিচ্ছিল।
-
সাথে লবন নিয়ে আসুন কারন পানিতে জোঁক থাকতে পারে। জোঁক লাগলে ছাড়ানোর জন্য কাজে আসবে।
-
জোক থেকে বাঁচতে ঘাস এড়িয়ে চলুন।
-
সাথে পাওয়ার ব্যাংক, টর্চ লাইট রাখুন।
-
পাহাড়ি রাস্তা তাই কিছু ঔষধ সঙ্গে নিতে পারেন। ব্যান্ডেজ ও ডেটল জাতীয় এন্টিসেপটিক ও নিতে পারেন, কেটে বা ছিলে গেলে কাজে আসবে।
-
যেহেতু পাহাড়ে যাচ্ছেন ট্র্যাক করতে হবে, তাই দড়ি নিতে পারলে ভাল।
-
সাতার না জানলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট নিতে পারেন।
-
চট্টগ্রাম কিন্তু ম্যালেরিয়াপ্রবণ একটি এলাকা। সাধারণত ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকাতে যাওয়ার আগে সতর্কতা হিসেবে যাত্রা শুরুর আগের ১ সপ্তাহ থেকে যাত্রা শেষ হবার পর ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ডক্সিসাইক্লিন ট্যাবলেট (১০০মি.গ্রা.) খেতে হয়। তারপরও পাহাড়ী এলাকাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে যাবেন।
-
এখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক সব সময় কাজ করেনা।