khoiyachora waterfalls

খৈয়াছড়া ঝর্ণা ( khoiyachora Waterfalls ) বাংলাদেশের চট্রগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়ে অবস্থিত একটি জলপ্রপাত। মীরসরাই উপজেলায় অবস্থিত অন্যান্য জলপ্রপাত যেমন কমলদহ ঝর্ণা, নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা, সহস্রধারা ঝর্ণা, ঝরঝরি ঝর্ণা প্রভৃতির তুলনায় খৈয়াছড়া ঝর্ণা ও এর ঝিরিপথ অন্যতম বৃহৎ। খৈয়াছড়া ঝর্ণায় মোট ৯টি বড় ঝর্ণার ধাপ (তথা ক্যাসকেড) ও অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ রয়েছে। মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নে ঝর্ণারটির অবস্থানের কারণে ঝর্ণাটির নামকরণ করা হয়েছে “খৈয়াছড়া ঝর্ণা”।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা মিরসরাই, চট্রগ্রাম – Khoiyachora Waterfalls

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পার্শ্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে এই ঝর্ণার অবস্থান। ঝর্ণাটির অবস্থান পাহাড়ের ভেতরের দিকে হওয়ায় সরসরি কোন যানবাহন ব্যবহার করে ঝর্ণাটির পাদদেশ পর্যন্ত পৌছানো সম্ভব হয় না। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক পাশ থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা স্থানীয় যানবাহন (যেমনঃ সিএনজি) ব্যবহার করে ঝর্ণাটির কাছাকাছি গ্রামে পৌছানো সম্ভব। কিন্তু পাহাড়ের পাদদেশের গ্রামের ভিতর দিয়ে ঝর্ণার মূল ধারা পর্যন্ত পৌছানোর বাকি পথের জন্য যানবাহনের কোন ব্যবস্থা নেই, পায়ে হেটেই শুধুমাত্র পৌছানো সম্ভব।

ধারণা করা হয় খৈয়াছড়া ঝর্ণাটি প্রায় ৫০ বছর আগে থেকেই প্রবাহিত হচ্ছে। ঝোপ ঝাড়ের আধিক্য ও জনমানহীন পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এটির অবস্থান আবিষ্কারে সময় লেগেছে। আবার অনেকে ধারণা করেন প্রায় ৫০ বছর আগে পাহাড়ি ঢলের ফলে এই ঝর্ণাটি তৈরি হয়েছে, এর পূর্বে এখানে ঝর্ণাটি ছিল না। ২০১০ সালে সরকার বারৈয়াঢালা ব্লক থেকে কুণ্ডের হাট (বড়তাকিয়া) ব্লকের ২৯৩৩.৬১ হেক্টরর পাহাড়কে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করায় খৈয়াছড়া ঝর্ণা জাতীয় উদ্যানের আওতাভুক্ত হয়।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা ৯ম ধাপ

২০১৭ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের “রামগড়-সীতাকুন্ড- রিজার্ভ ফরেস্টের” খৈয়াছড়া ঝর্ণাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্প, যার অন্যতম মূল লক্ষ্য হচ্ছে খৈয়াছড়া ঝর্ণার সংরক্ষণ।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাওয়ার উপযুক্ত সময়

বর্ষাকালে যাওয়াই উত্তম, তবে খৈয়াছড়া ঝর্ণায় সব সময়ই কম বেশি পানির প্রবাহ থাকে কিন্তু সব থেকে বেশি থাকে বর্ষাকালে। তবে বর্ষাকালে কিছু বিপদ থাকে। তাই সব থেকে ভালো হয় মাঝ বর্ষায় না গিয়ে বর্ষার আগ মহুর্তে বা পর পরই যাওয়া। সেপ্টম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর মাসে গেলে সুন্দর ভিউ পাবেন। তখন আশেপাশের পরিবেশ মিলিয়ে একটু বেশি সুন্দর মনে হয় খৈয়াছড়া ঝর্ণা কে।

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা যেতে কি গাইডের প্রয়োজন আছে

যারা খুব সৌখিন বা টাকার সমস্যা নেই তারা চাইলে পুরা ট্রেইল ঘুরে দেখার জন্য স্থানীয় একজন গাইড নিয়ে নিবেন। গাইড ভাড়া দরদাম করে নিবেন। ৩০০ – ৫০০ টাকার মতো নিতে পারে। তবে ট্রেইল সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে গাইড না নিলেও চলে। স্থানীয় কাউকে জিজ্ঞেস করলেই পথ দেখিয়ে দিবে। যদি একেবারেই ধারণা না থাকে, আর পুরা ট্রেইল কভার করতে চান তবে একজন গাইড নিয়ে নেয়াটাই ভালো বা World Travel BD এর ইউটিউব ভিডিও দেখে নিতে পারেন তবে রাস্তাঘাট চেনা সহজ হবে।

ঝিরি এবং পাহাড়ি পথে ট্রেইল শুরুর স্থানে বেশ কিছু খাবারের হোটেল আছে। ট্রেকিং শুরুর পূর্বে এখানে দুপুরের খাবারের অর্ডার করে গেলে তারা ফ্রিতে ব্যাগ রাখতে দেয়। আর অর্ডার না করেও প্রতি ব্যাগ ২০ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে রাখতে পারবেন। মোবাইল, ক্যামেরা, টাকা পয়সা সাথে নিয়ে বাকি সব কিছুই এখানে রেখে যেতে পারেন। তাহলে হাটতে সুবিধা হবে।

হোটেলের কাছে বাসের লাঠি ভাড়া পাওয়া যায়। ২০ টাকা নিবে। ফেরত দিলে ১০ টাকা রিটার্ন দিবে। ভালো দেখে একটা অবশ্যই নিয়ে নিবেন। লাঠি হাঁটার সময় বেশ কাজে দেয়।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা কভার করতে কত সময় লাগতে পারে

আপনাদের ভালোভাবে খৈয়াছড়া ঝর্ণা কভার করতে ৫/৬ ঘন্টা সময় লাগবে। তবে টিমের সবার হাঁটার শক্তির উপর নির্ভর করে সময় একটু কম বেশি লাগতে পারে। কারণ সবার হাঁটা চলা এক রকম নয়।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা ২য় ধাপ

কোথায় থাকবেন

এই ভ্রমণ একদিনের তাই থাকার দরকার পড়বেনা তবু নিতান্তই রাতে থাকতে চাইলে মীরসরাই বা সীতাকুন্ডে নিন্মমানের হোটেল পাবেন। সীতাকুণ্ড বাজার গেলে সেখানে হোটেল সাইমুন আছে। ভালো হোটেলে থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম চলে আসতে হবে।

আর আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আপনাদেরকে এই সুন্দর পাহাড়ি ঝর্ণা ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া। আপনি যদি ভ্রমণে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকেন, তাহলে এখনি যোগাযোগ করুন আমাদের সঙ্গে।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণে সতর্কতা ও কিছু পরামর্শ

  • নোংরা বা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকবেন।
  • আবহাওয়া খারাপ দেখলে আপনাকে অতিরিক্ত সাবধান হতে হবে না হলে অনেক সময় আটকে পড়তে পারেন।
  • অনেক সময় আটকে পড়া লাগতে পারে উপরে বৃষ্টি হলে। সুতরাং সকাল সকাল উপরে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • ভালো মানের গ্রিপের জুতা পরে যাবেন।
  • ঝর্ণায় যাওয়ার সময় সর্তক হয়ে পথ চলতে হবে কারন রাস্তা বেশ কঠিন এবং পিচ্ছিল।
  • সাথে লবন নিয়ে আসুন কারন পানিতে জোঁক থাকতে পারে। জোঁক লাগলে ছাড়ানোর জন্য কাজে আসবে।
  • জোক থেকে বাঁচতে ঘাস এড়িয়ে চলুন।
  • সাথে পাওয়ার ব্যাংক, টর্চ লাইট রাখুন।
  • পাহাড়ি রাস্তা তাই কিছু ঔষধ সঙ্গে নিতে পারেন। ব্যান্ডেজ ও ডেটল জাতীয় এন্টিসেপটিক ও নিতে পারেন, কেটে বা ছিলে গেলে কাজে আসবে।
  • যেহেতু পাহাড়ে যাচ্ছেন ট্র্যাক করতে হবে, তাই দড়ি নিতে পারলে ভাল।
  • সাতার না জানলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট নিতে পারেন।
  • চট্টগ্রাম কিন্তু ম্যালেরিয়াপ্রবণ একটি এলাকা। সাধারণত ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকাতে যাওয়ার আগে সতর্কতা হিসেবে যাত্রা শুরুর আগের ১ সপ্তাহ থেকে যাত্রা শেষ হবার পর ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ডক্সিসাইক্লিন ট্যাবলেট (১০০মি.গ্রা.) খেতে হয়। তারপরও পাহাড়ী এলাকাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে যাবেন।
  • এখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক সব সময় কাজ করেনা।cry
Share this post