জাফলং

প্রকৃতি কন্যা হিসাবে এক নামে পরিচিত সারাদেশে, সিলেটের জাফলং Jaflong । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি জাফলং সিলেট jaflong sylhet । জাফলং কোথায় অবস্থিত ? – খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। জাফলংকে আকর্ষণীয় করেছে পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ। সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড় টিলা ও ডাউকি পাহাড় থেকে জলপ্রপাত অবিরামধারায় প্রবাহমান, ডাউকি ঝুলন্ত ব্রীজ, স্বচ্ছ হিমেল পানির পিয়াইন নদী,গহিন অরণ্যের উঁচু পাহাড় ও নিরবতার এসব দৃশ্যপট দেখতে প্রতিদিনই দেশী-বিদেশী পর্যটকরা ছুটে আসেন। প্রকৃতি কন্যা ছাড়াও যেসকল নামে পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিত জাফলং jaflong তা হচ্ছে বিউটি স্পট, পিকনিকস্পট, সৌন্দর্যের রাণী।

জাফলং ভ্রমণ গাইড – Jaflong Travel Guide

জাফলং ঝুলন্ত ব্রিজ – Jaflong Hanging Bridge

জাফলং এর ইতিহাসঃ

হাজার বছর ধরে খাসিয়া জৈন্তা-রাজার অধীন নির্জন বনভূমি ছিল এই প্রকৃতি কন্যা জাফলং। খাসিয়া জৈন্তা রাজ্যের অবসান ঘটে ১৯৫৪ সালে যখন জমিদারী প্রথা বিলুপ্তি হয়। এরপর জাফলংয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পতিত পড়ে রয়েছিল বেশ কয়েক বছর। তারপর নৌ পথে পাথর ব্যবসায়ীরা পাথরের সন্ধানে জাফলং আসতে শুরু করেন। এই পাথর ব্যবসার প্রসার ঘটায় গড়ে উঠে নতুন জনবসতিও। ৫৫ কিলোমিটার সড়ক প্রতিষ্ঠিত হয় আশির দশকে সিলেটের সাথে জাফলং এর যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার্থে। তারপরেই জাফলংয়ের নয়না ভিরাম সৌন্দর্যের কথা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। প্রকৃতি প্রেমীর পাশাপাশি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভিড় জমতে থাকে জাফলংয়ে। বাংলাদেশের সেরা পর্যটন স্পট গুলোর মধ্যে সিলেট জাফলং ও এখন একটি সেরা পর্যটন স্পটে পরিণত হয়েছে।

jaflong

জাফলং সিলেট – Jaflong Sylhet

জাফলং এর দর্শনীয় স্থানঃ

সিলেট শহর থেকে জাফলং – Jaflong যাওয়ার রাস্তাটি আঁকাবাঁকা পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে। যাওয়ার পথে যেসকল দর্শনীয় স্থান পাবেন
১। সিলেট আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট
২। হযরত শাহ পরান রহঃ এর মাজার
৩। সবুজ পাহাড়
৪। সারি সারি চা বাগান
৫। লালা খাল
৬। জাফলং-ডাউকি ল্যান্ড বর্ডার
৭। বিশাল হাওড় ইত্যাদি।
৮। জাফলং রয়েছে সুন্দর পাথরের নদী যার পানি খুবই স্বচ্ছ
৯। জাফলং জিরো পয়েন্ট – Jaflong Zero Point
১০। ডাওকি জুলন্ত ব্রিজ
১১। মায়াবী ঝর্ণা বা সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা (নদী পার হলে পাবেন)।

জাফলং এর সৌন্দর্য

জাফলং জিরো পয়েন্ট – Jaflong Zero Point

জাফলং যাওয়ার উপযুক্ত সময়ঃ

বর্ষাকাল জাফলং ( Jaflong ) যাওয়ার সব থেকে ভালো সময়। এই সময়ই জাফলং এর পূর্ণ সৌন্দর্য দেখা যায়। তবে অবশ্যয়ই খেয়াল রাখবেন যেন তা কোনভাবেই মাঝ বর্ষায় না হয়। কারণ তখন বন্যায় সিলেট জাফলং এর সব কিছু ডুবে একাকার হয়ে যায়।

বর্ষার শুরুর সময়ে অর্থাৎ মে মাসের শেষ সপ্তাহ এবং বর্ষার শেষ সময়ে অর্থাৎ জুনের মাঝামাঝি বেস্ট সময়। তবে সিলেট  জাফলং সব সময়েই যেতে পারবেন কারন একেক ঋতুতে জাফলং একেক রূপ ধারণ করে।

জাফলং এর পাথর

জাফলং কিভাবে যাবোঃ

সিলেট জাফলং ( Sylhet Jaflong ) যাওয়ার জন্য আপনাকে বাংলাদেশের সিলেট জেলায় সর্বপ্রথম যেতে হবে।

ঢাকা থেকে সিলেট কিভাবে যাবেনঃ

রাজধানী ঢাকা থেকে আপনি সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে যেতে পারেন সিলেট শহর।

বাসঃ ঢাকার গাবতলী, ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ, শ্যামলী, গ্রিনলাইন, সৌদিয়া, ইউনিক, এস আলম, লন্ডন এক্সপ্রেস ও এনা ইত্যাদি পরিবহন প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত কিছুক্ষণ পর পর সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসি বাসের ভাড়া জনপ্রতি বাসভেদে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা এবং নন-এসি ভাড়া জনপ্রতি ৫৭০ টাকা। প্রায় ২৪০ কিলোমিটার ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব এবং প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘন্টা সময় লাগে বাসে করে সিলেট পৌঁছাতে।

ট্রেনঃ ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশান থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে চাইলে স্টেশান থেকে উপবন, পারাবত, জয়ন্তিকা অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে যেতে পারেন। ট্রেনের টিকেটের মূল্য শ্রেণী ভেদে ৩২০ থেকে ১০৯৯ টাকা। প্রায় ৭-৮ ঘন্টা ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে।

বিমানঃ ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে সিলেট যাওয়ার জন্য আকাশ পথেও প্রতিদিন বেশ কয়েকটি ফ্লাইট রয়েছে। প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগে যার জন্য আপনাকে ভাড়া গুনতে হবে ৩০০০/- থেকে ১০০০০/- টাকা। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নভোএয়ার, বিমান বাংলাদেশ এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমানে সিলেট যেতে পারবেন।

চট্রগ্রাম থেকে সিলেট কিভাবে যাবেনঃ

বাসঃ চট্রগ্রাম থেকে লন্ডন এক্সপ্রেস, গ্রীনলাইন, এনা ও সৌদিয়া সহ অন্যান্য পরিবহনের বেশ কিছু বাস প্রতিদিন সিলেট যায়। এসি বাসের জন্য ১২০০-১৪০০ টাকা ও নন-এসি বাসের জন্য আপনাকে ভাড়া গুনতে হবে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।

ট্রেনঃ চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যাওয়ার জন্য পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন রয়েছে। শ্রেণী অনুযায়ী জনপ্রতি ট্রেনের টিকেট মূল্য ৩৭৫ টাকা থেকে ১৩৩৮ টাকা।

বিমানঃ চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যাওয়ার জন্য বিমানে ঢাকায় এসে সিলেট যাবার সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রায় ৬০০০ থেকে ১৮০০০ টাকা লাগতে পারে।

সিলেট শহর থেকে সিএনজি, লেগুনা, প্রাইভেট কার ও বাসে করে আপনারা জাফলং ( Jaflong ) যেতে পারবেন তবে জাফলং জিরো পয়েন্ট (Jaflong Zero Point ) যেতে হলে সিএনজি, লেগুনা ও প্রাইভেট কার নিতে হবে। সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ থেকে জাফলং এর উদ্দেশ্যে প্রায় এক ঘন্টা পর পর বাস ছাড়ে। বাসের ভাড়া ৮০ টাকা করে।

তাছাড়া সিএনজি রিজার্ভ করতে পারবেন নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে এবং পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট এর সামনে থেকেও পেয়ে যাবেন। সারাদিনের জন্য ১৪০০ – ১৬০০০ টাকা ভাড়া নিবে। মাক্রোবাস স্ট্যান্ড থেকে ৩০০০ – ৩৫০০ টাকায় মাইক্রোবাস ভাড়া করে নিতে পারেন। অথবা ২০০০ টাকায় লেগুনা ভাড়া করেও যেতে পারেন। কিন্তু বাস থেকে লেগুনা, সিএনজি বা মাইক্রোবাসই উত্তম। তাহলে আসা-যাওয়ার মাঝে যে স্পট গুলো পড়বে সেগুলো দেখতে পারবেন। তবে যে বাহনই নেন না কেন, অবশ্যই দরদাম ঠিক করে নিবেন। ছুটির দিনে অন্য দিনের তুলনায় ভাড়া একটু বাড়ে।

জাফলং এর সৌন্দর্য

কোথায় থাকবেনঃ

জাফলং থাকার জন্য তেমন কোন ভালো মানের আবাসিক হোটেল পাবেন না। আর পেলেও দরকার নাই ওখানে থাকার কারণ, জাফলং দেখা শেষ করে চলে আসবেন সিলেট শহরে। কারণ সিলেট শহর থেকে অন্যান্য ভ্রমণ স্থানে যেতে সুবিধা হবে। কম খরচে থাকতে চাইলে এখানে ৫০০ – ১০০০ টাকার ভিতর হোটেল রয়েছে। তবে হোটেল নেয়ার সময় যে বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে, সেটা হচ্ছে যেখান থেকে সব দিকে মুভ করার যানবাহন পাওয়া যায়। তাই এই রকম জায়গা হিসাবে আমরা দরগা গেট হতে আম্বরখানা ও তালতলা, লামাবাজার বা কদমতলী এলাকা নির্বাচন করতে পারি।

আপনি যদি ভালমানের আবাসিক হোটেলে থাকতে চান তবে হোটেল হলি গেইট, পানসি ইন, হলি ইন, ব্রিটানিয়া হোটেল, লা ভিস্তা হোটেল, হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি হোটলে থাকতে পারবেন। এর জন্য খরচ পড়বে ২,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। ৮,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকায় প্রতি রাতের জন্যে লাক্সারী হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে পাবেন হোটেল নূরজাহান গ্র্যান্ড, নিরভানা ইন, রোজ ভিউ হোটেল, গ্র্যান্ড প্যালেস, নাজিমগর রিসোর্ট সহ আরও বেশ কিছু হোটেল।

বিশেষ করে জফলং ( jaflong ) যদি থাকতেই হয় তবে মামার বাজার এলাকায় হোটেল প্যারিস ও জাফলং ইন হোটেল সহ আরো কিছু রেস্ট হাউজ পেয়ে যাবেন। এছাড়া জাফলংয়ের কাছে জৈন্তিয়া হিল রিসোর্ট পেয়ে যাবেন সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ ভিউ সহ। পূর্ব অনুমতি সাপেক্ষে সরকারী রেস্ট হাউজে থাকতে পারবেন।

রেষ্ট হাউজ ও গেষ্ট হাউজের তথ্যঃ

১। গ্রীণ পার্ক রেষ্ট হাউজ যা জাফলং এর নলজুরীতে অবস্থিত। যোগাযোগ: সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা- ০১৭১১-১৮০৫৭৪, কেয়ারটেকার: ০১৭৬৬-৮৫৭১৬৮
২। উপজেলা হেড কোয়ার্টার জেলা পরিষদ রেষ্ট হাউজ। যোগাযোগ: ইউএনও মোবাইল নাম্বার ০১৭৩০ ৩৩১০৩৬। কেয়ারটেকার মোবাইল নাম্বার: ০১৭৩৭৬৯৬৭৮১।
৩। জাফলং সওজ বাংলো, যোগাযোগ- সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সিলেট, নির্বাহী প্রকৌশলী-০১৭৩০ ৭৮২৬৬২।
৪। নলজুরী রেষ্ট হাউজ- যা জাফলং এর নলজুরীতে অবস্থিত । যোগাযোগ: সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা – ০১৭১১-৯৬৬০১৯, কেয়ারটেকার: ০১৭৫২-২২৬৩৭৫

কোথায় খাবেনঃ

জাফলং এ কিছু রেস্টুরেন্ট হয়েছে এখন। তবে তার সবগুলোই সাধারণ মানের। এর মধ্যে একটু ভালো সীমান্ত পর্যটক ভিউ রেস্টুরেন্ট। এখানে আপনি দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। আর এখানে খেতে না চাইলে খাবার নিয়ে যেতে পারেন সিলেট শহর থেকে। সিলেটের জিন্দাবাজার এলাকায় বেশ কিছু ভালো মানের খাবারের জন্য রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
যেমন: পানশি, পাঁচ ভাই, পালকি।

খাবারের জন্য জাফলং এ পর্যটকদের জন্য কয়েকটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

১। পিকনিক সেন্টার রেস্টুরেন্ট,জাফলং বল্লাঘাট। যোগাযোগ: ম্যানেজার- ০১৭১২ ৭৪৬৪২৫
২। পর্যটন রেস্তোরা, তামাবিল জিরো পয়েন্ট, জাফলং; যোগাযোগ: ম্যানেজার ০১৮১৯৯-০৪০৭৫
৩। ক্ষুধা রেস্টুরেন্ট, জাফলং বল্লাঘাট। যোগাযোগ: ম্যানেজার; ০১৭২১-৯১২৫১৭

আশেপাশের দর্শনীয় স্থানঃ

১। বিছনাকান্দি
২। ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর
৩। রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট
৪। লালা খাল

জাফলং পানিতে বা পাথরে নামার ক্ষেত্রে সতর্কতাঃ

জাফলং পানিতে নামার আগে অবশ্যই পানির স্রোত দেখে সর্তকতার সাথে নামতে হবে। যেকোন পাথুরে বিচ বা জাফলং ও সাদা পাথরের মত জায়গায় নামার সময় সর্তকতা অবলম্বন করে নামা উচিত। যারা সাঁতার জানেন না তারা অবশ্যয়ই লাইফ জ্যাকেট পরে নামবেন। পাথরের উপর দিয়ে হাটার সময় ধীরে সর্তকতার সাথে পা ফেলতে হবে, তা না হলে ঘটে যেতে পারে দূর্ঘটনা।

জাফলং এর ছবি

সিলেট জাফলং এর ভিডিও

Share this post