পল্লী কবি জসিম উদ্দিন

পল্লী কবি জসিম উদ্দিন এর বিখ্যাত কবিতা কোনটি ? কবি জসিম উদ্দিন এর কবিতা নকশী কাঁথার মাঠ । কবি জসিম উদ্দিনের উক্তি -আমাদের দেশের লোকেরা যেমন ভুত, প্রেত, ওঝা পীর ও ফকিরে বিশ্বাস করে তেমনি হোমিওপ্যাথিক ঔষধে বিশ্বাস করে।

আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর, আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।

ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিছে ঘন আবীরের রাগে অমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ জাগে।

পল্লী কবি জসিম উদ্দিন – Palli Kabi Jasimuddin

পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের  জন্ম – মৃত্যু  ও পারিবারিক পরিচিতি

পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের জন্ম ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে। মোহাম্মাদ জসীম উদ্‌দীন মোল্লা তার পূর্ণ নাম হলেও তিনি জসিম উদ্দিন নামেই পরিচিত। তার বাবার বাড়ি ছিল একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। বাবার নাম আনসার উদ্দিন মোল্লা। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মা আমিনা খাতুন ওরফে রাঙাছুট। তিনি ১৪ মার্চ ১৯৭৬ সনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার শেষ ইচ্ছা অনুসারে তাকে ফরিদপুর জেলার আম্বিকাপুর গ্রামে তার দাদীর কবরের পাশে দাফন করা হয়। গোবিন্দপুরে প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে তার জন্মদিনকে স্মরণ করে জসীম মেলা নামে একটি পাক্ষিক উৎসব উদযাপন করা হয়। তার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়েছে।

শিক্ষাজীবন

পল্লী কবি জসিম উদ্দিন (Palli Kabi Jasim Uddin) ফরিদপুর এর ওয়েলফেয়ার স্কুলে পড়ালেখা করেন শুধু তাই নয় পরবর্তীতে পল্লী কবি জসিম উদ্দিন ফরিদপুর জেলা স্কুলে (বর্তমানে যার নামকরণ করা হয়েছে ফরিদপুর জিলা স্কুল) পড়ালেখা করেন। এখান থেকে কবি তার প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯২১ সালে। পল্লী কবি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে বি. এ. শেষ করেন ১৯২৯ সালে এবং এম. এ. শেষ করেন ১৯৩১ সালে ।

পল্লী কবি জসিম উদ্দিন এর ছদ্মনাম

জসিম উদ্দিন এর ছদ্মনাম তুজাম্বর আলী। পরবর্তীতে তিনি ‘মুসাফির’ ‘সত্যপীর’, ‘টেকচাঁদ’, ‘ওমর খৈয়াম’, ‘প্রিয়দর্শী’ প্রভৃতি ছদ্মনামে বিভিন্ন ধরনের পত্রিকায়, যেমন : দেশ, সত্যযুগ, আনন্দবাজার, বসুমতী, মোহাম্মদী প্রভৃতিতে কলাম লিখেন।

পল্লী কবি জসিম উদ্দিন কে পল্লী কবি বলা হয় কেন ?

জসীমউদ্দিন পল্লী নিয়ে বাংলা কবিতায় একাই কবিতা লিখেছেন এমন নয় বরং বন্দে আলী মিয়াঁ, যতীন্দ্র মোহন বাগচী, কুমুদরঞ্জন মল্লীক পল্লী নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কিন্তু তাদের কবিতায় পল্লীর প্রকৃত চিত্র, প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের কবিতায় পাওয়া যায়, এ কারনে কবিকে পল্লী কবি বলা হয়

পল্লী কবি জসিম উদ্দিন এর কাব্যগ্রন্থ

  1. রাখালী (১৯২৭)
  2. নকশী কাঁথার মাঠ (১৯২৯)
  3. বালুচর (১৯৩০)
  4. ধানখেত (১৯৩৩)
  5. সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩)
  6. হাসু (১৯৩৮)
  7. রুপবতি (১৯৪৬)
  8. মাটির কান্না (১৯৫১)
  9. এক পয়সার বাঁশী (১৯৫৬)
  10. সখিনা (১৯৫৯)
  11. সুচয়নী (১৯৬১)
  12. ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে (১৯৬২)
  13. মা যে জননী কান্দে (১৯৬৩)
  14. হলুদ বরণী (১৯৬৬)
  15. জলে লেখন (১৯৬৯)
  16. পদ্মা নদীর দেশে (১৯৬৯)
  17. মাগো জ্বালায়ে রাখিস আলো (১৯৭৬)
  18. কাফনের মিছিল (১৯৭৮)
  19. মহরম
  20. দুমুখো চাঁদ পাহাড়ি (১৯৮৭)

ওখানে গেলে যা পাবেন

পল্লী কবি জসিম উদ্দিন এর বাড়ি (Palli Kabi Jasimuddin) নিস্তব্ধ গ্রাম, স্রোত হীন কুমার নদ, খোলা বাতাস ও প্রকৃতির দৃশ্য মন কেড়ে নেয়। কুমার নদের পশ্চিমেই কবির বাড়ি। প্রবেশ করতেই পল্লী গ্রামের প্রকৃতি যেন আপনার অনুভূতি স্পর্শ করে স্বাগত জানাবে। চারিদিকের গাছপালা, বাগান, কবির সমাধি ক্ষেত্র, পাখির কিঁচির মিচির শব্দ। কবির বাড়ী-আঙ্গিনায় চারটি দোচালা টিনের ঘর। তাতে লেখা; কোনটি কার ঘর। দর্শনার্থীদের নামাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে নামাজের ঘর। দক্ষিণে কবির ঘরে প্রবেশের অনুমতি না থাকায় চার পাশটা ঘুরেই দেখতে হলো। বারান্দায় ছোট ছোট পাটের ছিকা। ভিতরে নকসা করা মাটির রঙিন কলস রাখা। কিছক্ষণ কবির ঘরের আশে পাশে ঘুরলাম। অনুভূতিতে অনুভব করছিলাম।

অতি সাধারণ ঘরেই জন্ম নিয়েছেন পল্লী কবি জসিম উদ্দিন। ছোট্ট টিনের ঘরেই পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের জন্ম। কবির স্মৃতিঘরে বিভিন্ন মূহুর্তের ছবি তুলে চার দেয়ালে সাজিয়ে রাখা হয়েছে যা ঐ ঘরটিকে আরো সুন্দর করে তুলেছে। কবির জীবনের ব্যবহারের বিভিন্ন জিনিস। তার কাঠের আলমারি, থেকে শুরু করে আছে একটা সুন্দর পালকিও। কিন্ত স্মৃতিঘরের দুটি আলমারিতে সাজানো অসংখ্য মাটির পুতুল সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে দর্শনাথীদের। মজার ব্যাপার হলো প্রিয় কবির প্রিয় পুতুলগুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে সকলকে। স্মৃতিঘরের সামনে একটি সাইনবোর্ডে বিশ্বকবির লেখা। পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের কবিতার ভাব ভাষা, রস ও বর্ণে ফুটে উঠে পল্লী প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য।

উঠানের পূর্ব দিকে এখনও ঢেকি-ঘরটি’ স্মৃতি স্বরূপ আছে। ঢেকি-ঘরের সামনে কবির লিখা কিছু কথা মনকে ছুঁয়ে গেল। “আমাদের গরীবের সংসার। ঘি-ময়দা-ছানা দিয়ে জৌলুস পিঠা তৈরীর উপকরণ মায়ের ছিলো না। চাউলের গুড়া আর গুড় এই মাত্র মায়ের সম্পদ। ঘরের দেয়ালজুড়েও অনেক স্মৃতি কথা, টুকরো কাহিনী। বিভিন্ন ব্যবহার্য জিনিষগুলো এখনও কবির ইতিহাস। জীবনধারার প্রতিচ্ছবি। আছে তার ব্যবহারের কলম, বিভিন্ন বই খাতা ও অন্যান্য সামাগ্রি। সেখানেও রয়েছে অনেক মাটির ও তুলার পুতুল। ঘরের দেয়ালজুড়ে রয়েছে কবির নিজ জীবনের বিভিন্ন কথা লিখা যা ছবির মতই টানানো। ঘরজুড়ে কবির এতো স্মৃতিচিহ্ন, কবির অস্তিত্ত্বটাকে স্পষ্ট করে তুলেছে। কবির ঘরের সামনেই কবির নিজ হাতের ছোঁয়ায় লাগানো সেই গাছ আজও তাঁর বাড়িটিকে সাজিয়ে রেখেছে যা বাড়ির পল্লী প্রকৃতিকে আরো সৌন্দর্যে ভরিয়ে তুলেছে।

কবির সাথে প্রকৃতির যে কি নিবিড় সম্পর্ক। তা তাঁর বাড়িটি দেখলেই ধারনা করা যায়। কবির লাগানো সেই গাছগুলিতে ঝুলছে বিভিন্ন মাটির কলসি সে গাছে নাকি পাখি বাসা করতো, তাই সে সেইসব কলসি বেঁধে রাখতো যাতে পাখির নিশ্চিন্তে তাঁর গাছে থাকতে পারে। কতটা পল্লী প্রকৃতির প্রেমিক ছিলেন পল্লী কবি জসিম উদ্দীন । পুরো বাড়িই সেটির প্রতিচ্ছবি। এবার উঠান থেকে বেরিয়ে, বেশ কিছুটা পূর্ব দিকে ২০১১ সালে নির্মিত কবির পিতা আনসার উদ্দীনের স্মৃতিঘরটি দেখতে গেলাম। অন্যসব ঘরের থেকে কিছুটা ভিন্নতায় সাজানো এ ঘরটি। পুরো ঘরজুড়ে পাটের ছিকা যার ভিতরে মাটির কলস দিয়ে সাজানো। কাঠের আলমারি, ব্যবহৃত জিনিস ও বিভিন্ন ছবি রাখা।

ঘরে মাঝখানে কাঁচের চারকোনা বাক্সে রাখা সে সময়কার ব্যবহৃত শাড়ি, চাঁদর, টাইপ ম্যাশিন, কলম ইত্যাদি রয়েছে ব্যবহৃত মাটির পাত্র এবং আরো অনেক কিছু। সেই ঘরে রয়েছে কবির পিতা মাতার ছবিসহ তাঁর পুরো বংশ পরিচয়। এবার মাটি থেকে কিছুটা উচু কবি ও তার পরিবারের অনেক সদস্যের কবরের সামনে এসে দাড়ালাম।

কবির বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিরামহীন বয়ে চলা কুমার নদের পাড়ে শীতল বাতাসে এসে দাড়াতেই মনে হলো নদের পরিচ্ছন্ন পানিতে আজো যেন মিশে আছে কবির স্মৃতি। বয়ে চলা কুমার নদ, থেমে না থাকা সময়, এই বিষয়গুলো যেনো মনে করিয়ে দেয় কবি চলে গেছে শিখিয়ে গেছে কিভাবে প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হয় বা হবে। তাই আমাদেরকে অবশ্যই প্রকৃতিকে ভালোবেসে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দায়িত্ববান হতে হবে।

কিভাবে যাবেন পল্লী কবি জসিম উদ্দিন এর বাড়ি

ঢাকার গাবতলী থেকে গোল্ডেন লাইন এবং সাউথ লাইন পরিবহনের বাস পাওয়া যায়। এসি ৬০০ টাকা এবং নন-এসি ৩০০ টাকা ভাড়া। এদুটো বাস চেয়ার কোচ। এছাড়া নরমাল বাস রয়েছে সাউথ লাইন, কমফোর্ট লাইন, সুবর্ণ পরিবহণ। এই বাসে করে ফরিদপুর চলে যেতে পারবেন কোন ঝামেলা ছাড়াই। তারপর ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ২ কিলোমিটার দূরে কবির বাড়ি। রিক্সা, অটোরিক্সা বা প্রাইভেট কারে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন

ফরিদপুরে যাওয়ার পর ভ্রমণকারীর থাকার জন্য রয়েছে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল। ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ড এবং এর আশেপাশেই রয়েছে আবাসিক হোটেল গুলো। আবাসিক হোটেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ৮০ টাকা সর্বোচ্চ ভাড়া ৯০০ টাকা। আবাসিক হোটেল গুলোতে সিঙ্গেল ও ডাবল উভয় বেড রয়েছে। সরকারি কর্মকতা ও কর্মচারীদের জন্য রয়েছে সার্কিট হাউজ।

ফরিদপুরের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসমূহ

১. ফরিদপুর পৌর শেখ রাসেল শিশুপার্ক

Share this post