অতুলনীয় নকশায় সমৃদ্ধ করেছে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ। ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের উত্তর পাশে ষাটগম্বুজ বাস স্টপেজ সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত। বাগেরহাটের নামের সাথে “ষাটগুম্বজ“ মসজিদটি যেন আষ্টেপৃষ্ঠে মিলে মিশে একাকার হয়ে রয়েছে। এই মসজিদটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। সুলতানী আমলের অনন্য স্থাপত্যশৈলীর এই মসজিদ বাগেরহাট শহরের অন্যতম আকর্ষন। ষাটগম্বুজ ছাড়াও অসংখ্য মসজিদ, দীঘি ও স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন হযরত খানজাহান (রহ:)। ঐতিহাসিকদের ধারণা-বিলুপ্ত প্রায় প্রাচীন খলিফাতাবাদ নগরই আজকের বাগেরহাট। বিশ^ বিখ্যাত ফোবর্স ম্যাগাজিন হারিয়ে যাওয়া যে ১৫টি শহরের তালিকা করেছে তাতে রয়েছে এই শহরের নাম। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৮৩ সালে ঐতিহাসিক মসজিদের শহর হিসাবে ষাট গম্বুজ মসজিদসহ খানজাহানের স্থাপত্যগুলোকে তালিকাভুক্ত করে।

ষাটগম্বুজের গম্বুজ সংখ্যা, গঠন প্রকৃতি ও নামকরণঃ

মসজিদটি ষাটগুম্বজ নামে পরিচিত হলেও এতে মোট গুম্বজ আছে ৮১ টি। মসজিদের চার কোনের মিনার বা বুরুজের উপরের ৪ টি গুম্বজ বাদ দিলে গুম্বজের সংখ্যা ৭৭টি। আর ৭৭ টি গম্বুজের মধ্যে ৭০টি গুম্বজের উপরিভাগ গোলাকার এবং মসজিদের মাঝ বরাবর গোলাকার গুম্বজগুলোকে ৭ টি চার কোনাবিশিষ্ট গুম্বজ দিয়ে সংযোগ করা হয়েছে। দক্ষিন-পূর্ব কোনের বুরুজটির ভিতর দিয়ে উপরে বা ছাদে উঠার সিঁড়ি আছে। এর নাম ‘রওশন কোঠা। আর উত্তর-পূর্ব কোনের বুরুজটি দিয়েও উপরে উঠার সিঁড়ি রয়েছে। এর নাম আন্ধার কোঠা নামে পরিচিত। তবে বর্তমানে আন্ধার কোঠাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ধারনা করা হয় , ‘খান-উল-আযম উলুঘ খান ই জাহান এই মসজিদটিকে নামাযের কাজ ছাড়াও দরবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন। আর বড় দরজাটি ছিলো দরবার ঘরের প্রবেশ পথ। কেউ কেউ আবার মসজিদটিকে সে সময়ে মাদ্রাসা হিসেবে ব্যবহৃদ হত বলে ধারনা করেন। ষাটগুম্বজ মসজিদের পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি ৭ টি সারিতে বিভক্ত মোট ৭৭ টি গুম্বজ আছে। গুম্বজ গুলোর ভার বহনের জন্য নিচের অংশে সারিবদ্ধভাবে ৬০টি পাথরের থাম বা পিলার আছে। মসজিদটি বাইরের দিক থেকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিক থেকে প্রায় ১৪৩ ফুল লম্বা। আর বাইরের দিক থেকে প্রায় ১০৮ফুট ও ভিতরের দিক থেকে প্রায় ৯০ ফুট চওড়া। দেওয়াল গুলো প্রায় ৮.৫ ফুট পুরুত্ব। মসজিদের ভিতরে মেঝে থেকে ছাদের উচ্চতা প্রায় ২১ ফুট। মসজিদের ভিতরের পশ্চিম দেয়ালে ১০টি মিহরাব আছে। মাঝের মিহরাবটি আকারে বড় এবং তুলনা মূলক অধিক কারুকায্য মন্ডিত। এ মিহরাবের দক্ষিনে ৫টি ও উত্তরে ৪টি মিহরাব আছে। শুধু মাঝের মিহরাবের ঠিক পরের জায়গাটিতে উত্তর পাশে একটি ছোট দরজা রয়েছে। মসজিদটিতে মোট ২৬ টি দরজা আছে। পূর্ব দেওয়ালে ১১ টি এবং উত্তর ও দক্ষিন দেওয়ালে ৭ টি করে দরজা আছে। আর পশ্চিম দেওয়ালে ১ টি দরজা । মসজিদের ভেতরে ৬০ টি স্তম্ভ বা পিলারই পাথর কেটে বানানো হয়েছে। এদের কয়েকটি আবার পাথরের বাহিরাবরণে ইটের গাঁথুনি দিয়ে ঢাকা ছিল। ধারণা করা হয় মসজিদের প্লাস্টার বিহীন দেওয়ালের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্য এমনটা করা হয়েছিল।

ষাটগম্বুজ মসজিদের নামকরনের সঠিক ইতিহাস নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, সংস্কৃত শব্দ ‘সাত’ ও ফারসি শব্দ ‘ছাদ’ এর উপর গম্বুজ থাকায় এটি ‘ছাদগম্বুজ’ থেকে ষাটগম্বুজ হয়েছে। আবার কারো মতে, মসজিদের ভিতরে ৬ টি সারিতে ১০ টি করে মোট ৬০ টি পাথরের খাম্বার উপর ছাদ নির্মাণ হয়েছে বলে এর নাম হয়েছে ষাটগম্বুজ।
আবার কারও মতে মসজিদটির ছাদ সমতল নয়। এটি গুম্বজ আকৃতির। অর্থাৎ ছাদে গুম্বজ। যার থেকে মসজিদটি ‘ছাদগুম্বজ‘ নামে পরিচিতি লাভ করে। পরে কথ্যরুপে ‘ষাটগুম্বজ‘ নাম হয়েছে।

জনশ্রুতি আছে যে,হযরত খানজাহান (রহঃ) ষাটগুম্বজ মসজিদ নির্মানের জন্য সমূদয় পাথর সুদূর চট্টগ্রাম আবার কারও মতে ভারতের উড়িষ্যার রাজমহল থেকে অলৌকিক ক্ষমতা বলে জলপথে ভাসিয়ে এনেছিলেন। পুরো মসজিদ তৈরির মূল উপাদান চুন, সুরকি, কালোপাথর ও ছোট ইট। এই মসজিদের স্থাপত্যকলার সঙ্গে মধ্য এশিয়ার তুঘলক (তুরস্ক) স্থাপত্য শৈলির মিল রয়েছে বলে ধারনা বিশেষজ্ঞদের।

হযরত খানজাহান (রহঃ) এর নির্মানকাল ও অন্যান্য কীর্তি বা নিদর্শনঃ

১৪০০ খ্রীষ্টাব্দের গোড়ার দিকে সম্রাট ফিরোজ শাহ তুঘলকের শাসনামলে সুদুর দিল্লির জৌনপুর থেকে ইসলাম প্রচারের লক্ষ্যে এতদাঞ্চলে আগমন করেন মহান সাধক হযরত খানজাহান (রহঃ)। এ সময় ৬০ হাজার ভক্ত ও মুসলিম সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী তার সাথে ছিল বলে এলাকায় কথিত রয়েছে। দীর্ঘ এ পথ যাত্রায় তিনি প্রথমে রাজশাহীর সোনা মসজিদ এলাকায় আসেন। পরে সেখান থেকে ফরিদপুর, যশোরের বারো বাজার, খুলনার বাশুয়ারী, ফুলতলা হয়ে বাগেরহাট এসে তাবু স্থাপন করেন। এখানে এসে বন-জঙ্গল পরিস্কার করে ২০ বর্গমাইলের একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। যার নাম দেন খলিফাতাবাদ। তিনি খলিফাতাবাদ রাজ্যের প্রজা সাধারনের সুবিধার জন্য প্রথমে জাঙ্গাল বা রাস্তা তৈরী করেন। দক্ষিণাঞ্চলের লবনাক্ততার কবল থেকে প্রজাসাধারনের সুপেয় পানির জন্য খনন করেন একাধিক দীঘি-নালা। কথিত আছে এ অঞ্চলে তিনি ৩৬০টি দীঘি খনন করেন। নির্মাণ করেন ছোট-বড় ৩৬০টি মসজিদ ও সরাইখান। এ অঞ্চলে হযরত খানজাহান (রহঃ) এর অমর কীর্তির প্রধান নিদর্শন ষাটগম্বুজ মসজিদ। যা আজও স্ব-মহিমায় দাড়িয়ে আছে।
মসজিদটির গায়ে কোন শিলালিপি নেই। তাই এটি কে কখন নির্মাণ করেছিলেন সে সম্বন্ধে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী দেখলে নিশ্চিত ভাবে ধারনা করা হয় এটি খান-ই-জাহানের নির্মিত। ধারনা করা হয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে ‘খান-উল-আযম উলুঘ খান ই জাহান (খানজাহান আলী (রহঃ) নামে বেশি পরিচিত) মসজিদটি নির্মান করেন। এ মসজিদের পশ্চিম পাশে রয়েছে ঐতিহাসিক ঘোড়া দীঘি। যা দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। উত্তর-পূর্ব কোনে রয়েছে কোদাল ধোয়া দীঘি। উত্তরে ৩শ মিটার দূরে রয়েছে খানজাহানের বসত ভিটা বা ঢিবি এবং দক্ষিনে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়ক। খানজাহানের মাজার দরগাহ থেকে মসজিদটির দুরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটার। আকৃতির বিচারে বাংলাদেশের ভূখন্ডে অবস্থিত মধ্যযুগীয় মসজিদ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ষাটগুম্বজ মসজিদ। এটি হযরত খান জাহান (রহঃ) এর সর্ববৃহৎ কীর্তি বা নিদর্শন।

হযরত খানজাহান (রহঃ) এর সঠিক ইতিহাস আজও জানা যায়নি। শুধুমাত্র তার কবরগাত্রের শিলালিপি থেকে যেটুকু জানা যায়, তার উপাধী ছিল উলুখ খান আল আজম হযরত খানজাহান আলাইহে রহমত। ১৪৪০ সালের দিকে ভক্ত ও আশেকানদের নিয়ে তিনি বাগেরহাটে আসেন। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে রত ছিলেন। এরপর ভক্ত ও আশেকানদের কাঁদিয়ে ১৪৫৯ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি তিরোধান লাভ করেন (৮৬৩ হিজরি ২৬ জিলহজ্ব)। ইসলাম প্রচারের পাশাপাশি মানব সেবার ব্রত নিয়ে তিনি এ অঞ্চলে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে তার শাসনকার্য পরিচালনা করেন। এখানে তার সময়ে নির্মিত টিকে থাকা ও ধ্বংসপ্রাপ্ত রাস্তাঘাট, দিঘি-নালা ও বিভিন্ন স্থাপত্য দেখে ঐতিহাসিকরা এমনই ধারনা করছেন। ষাটগম্বুজ মসজিদ ছিল তার রাজ্যের পার্লামেন্ট ভবন। এখানে বসেই তিনি তার শাসন ও বিচার কাজ পরিচালনা করতেন।

টিকেট মূল্যঃ

ষাটগুম্বজ মসজিদ কম্পাউন্ডে প্রবেশ ফি পাঁচ বছরের অধিক প্রত্যেকের জন্য বাধ্যতামূলক।

দেশি পর্যাটকদের জন্য ২০ টাকা।

বিদেশি পর্যাটকদের জন্য ২০০ টাকা।

তবে সার্কভূক্ত দেশ সমূহের নাগরিকদের জন্য ১০০ টাকা।

শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশ ফি মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত জন প্রতি ৫ টাকা।

সময়সূচীঃ

গ্রীষ্মকালে কেল্লা খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এবং আধ ঘন্টার জন্যে বন্ধ থাকে দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত।

শীতকালে কেল্লা খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এবং দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বন্ধ থাকে।

শুক্রবারে সাড়ে বারোটা থেকে তিনটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে জুম্মার নামাযের জন্যে।

রবিবারের দিন সাধারণ ছুটি থাকে এবং পরের দিন অর্থাৎ সোমবার বেলা ২.০০ টা থেকে খোলা থাকে।

সিংগাইর মসজিদঃ

সিংগাইর মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে মাত্র ২৫ মিটার দক্ষিণ-পূর্বে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের পাশে সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত এ মসজিদটি।

মুঘল শাসনামলে খান জাহান আলী নির্মাণ করেন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম সিঙ্গাইর মসজিদটি।

একগম্বুজ বিশিষ্ট সিংগাইর মসজিদের চর্তুদিকে বক্রকার কার্ণিশ। মসজিদটিতে রয়েছে ৪টি খিলান যুক্ত দরজা। একটি অলংকৃত মেহরাব রয়েছে মসজিদের ভিতরে।

সিংগাইর মসজিদ একগম্বুজ মসজিদ। ইটের দেওয়াল গুলো গড়ে ২.১০ মিটার পুরু। দেয়ালের প্রতিটি কোণার বাইরের দিকে গোলাকার ভাবে বর্ধিত একটি বুরুজ আছে। পূর্ব দেয়ালে তিনটি দরজা আছে। এই দরজার সোজাসুজি পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মেহরাব অবস্থিত। অন্যান্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য ষাটগম্বুজ মসজিদের অনুরূপ। মসজিদের ভিতরে পশ্চিম দেয়ালের মাঝের অংশে একটি অলংকৃত মেহরাব আছে। এরকম অলংকৃত পোড়া মাটির নকশা চোখে পড়ে দরজাগুলোর দুই পাশে।

খান জাহানের সমাধিঃ

খান জাহানের সমাধি কথিত ঠাকুর দিঘি’র পাড়ের উপর অবস্থিত একটি কৃত্রিম উঁচু ঢিবি যা বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। যা বর্তমানে পরিচিতি লাভ করেছে খান জাহান সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স নামেও। এই কমপ্লেক্স এর মধ্যেই আছে খান জাহান আলীর বর্গাকার সমাধিসৌধ, রয়েছে খান জাহান আলীর ‘দেওয়ান’ মুহম্মদ তাহির এর সমাধি, এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ এবং তথাকথিত কল্পিত রান্নাঘর । খান জাহান আলী ও তার দেওয়ান এর সমাধিসৌধ-এর স্থানটি একটি দেয়াল দ্বারা বেষ্টিত।

বাগেরহাট জেলা সদর হতে প্রায় ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে খান জাহানের সমাধি ও ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় ২.৫ কি:মি: দক্ষিণ-পূর্বে ‘খঞ্জালী দীঘি’ বা ‘খানজাহান দীঘি’র (ঠাকুর দীঘি) উত্তর পার্শ্বে হযরত খানজাহান (রহ:) এর এই সমাধি অবস্থিত।

এই সমাধি বাইরের দিক থেকে ৬৭.১ মিটার পূর্ব-পশ্চিমে ও ৬৪.৭ মিটার উঁচু দেয়াল দ্বারা উত্তর-দক্ষিণের সাইড পরিবেষ্টিত। সমাধিসৌধটি প্রায় ১৩.৭ মিটার বাইরের দিকে এবং ৯.১ মিটার ভেতরের দিকে প্রসস্থ ইটের তৈরি একটি বর্গাকার আয়তনের ভবন, এটি দিয়েই কমপ্লেক্সের প্রধান অংশ গড়ে উঠেছে । এটির বাইরের দিকে রয়েছে চারকোণা ধরনের শক্ত গোলাকার টাওয়ার ।এই সমাধিসৌধ এর চারদিকে রয়েছে ২.৪ মিটার পুরু দেয়াল , এটি ০.৯ মিটার পর্যন্ত পাথর আস্তরন দ্বারা আবৃত করা । মুলত এটি নিচের আর্দ্রতা থেকে এই ভবনকে রক্ষার জন্য একটি কৌশল । এই সমাধিসৌধের ভেতরে প্রবেশের জন্য রয়েছে পাথরের তৈরি চারটি খিলানপথ। কিন্তু বর্তমান সময়ে উত্তর দিকের প্রবেশপথটি ইট দ্বারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সৌধটির ভেতরের অংশের দিকে রয়েছে ইটের তৈরি গোলার্ধ আকৃতির গম্বুজ দ্বারা ঢাকা । এই গম্বুজের দেয়ালের ভেতরে দিকে রয়েছে পাথরের ব্রাকেট এর থেকে বেরিয়ে আসা স্কুইঞ্চ । এর কোণের দিকের টাওয়ার গুলিতে আছে ঘুরানো ত্রিমাত্রিক বাঁকানো কার্নিশের বৈশিষ্ট্য, যা তৎকালীন বাংলার এক সক্রিয় স্থাপত্যরীতির পরিচায়ক । খান জাহান আলীর পাথরের তৈরি কবরটি সমাধিসৌধের একদম মাঝখানে অবস্থিত । উপরের দিকে রয়েছে চারস্তরবিশিষ্ট এবং সাধারণ কৌণিক পিপা আকৃতিতে চমৎকার সব নকশা । পাথর দ্বারা নির্মিত এর উপরের তিনটি স্তরে আরবি ও ফারসি লেখা দ্বারা আবৃত যা ধর্মীয় প্রকাশ হিসেবে করা । তবে এই লেখাগুলির অধিকাংশই এখন অস্পষ্ট । তার কবরের নিচের দুটি স্তর করা হয়েছে ইটের তৈরী। এ ইটগুলি দ্বারা ভিতরের সম্পূর্ণ মেঝে নানা বর্ণের ষড়ভুজী এবং বর্গাকার টালির নকশা করা । বর্তমানে দর্শনার্থীদের অনবরত ব্যবহার করার ফলে এই টালিগুলির আসল উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে গেছে। এই পাথরের সমাধিসৌধে ব্যবহূত লিপি থেকে এটা জানা যায় যে, খান জাহান আলী ২৭ জিলহজ ৮৬৩ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন। আর মৃত্যুর পূর্বেই তিনি তার সমাধি নির্মাণ করেছিলেন বলে ধারণা ।

কিভাবে যাবেনঃ

ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে বাসে সরাসরি বাগেরহাট যাওয়া যায়। এছাড় কমলাপুর থেকে ট্রেনে খুলনা হয়ে বাগেরহাট যাওয়া যায়। অপরদিকে সদরঘাট থেকে ষ্টিমারে মোড়েলগঞ্জে নেমে সেখান থেকে বাগেরহাটের ষাটগুম্বজ মসজিদে চলে যেতে পারেন।

গাবতলী থেকে সোহাগ (০১৭১৮৬৭৯৩০২), শাকুরা (০১৭১১০১০৪৫০), হানিফ ও ইগল পরিবহন ছেড়ে যায়। ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। যাতায়াতে সময় লাগে প্রায় ৭ ঘন্টা।

ঢাকার সায়দাবাদ থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এবং সন্ধা ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত অনেকগুলা গাড়ী ছেড়ে যায়। – মেঘনা (০১৭১৭১৭৩৮৮৫৫৩), পর্যটক (০১৭১১১৩১০৭৮), বনফূল, ফাল্গুনী, আরা, বলেশ্বর, হামিম ও দোলা।

বাসস্ট্যান্ড থেকে ষাট গম্বুজ মসজিদ সাত কিলোমিটার এবং খানজাহান আলীর (রহ.) সমাধিসৌধ থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে পশ্চিমে ষাট গম্বুজ মসজিদ চত্বর। রিকশাভাড়া ৩০ টাকা।

প্রথমে আপনারা আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে করে খুলনা গিয়ে তারপর বাস ধরে বাগেরহাটে যেতে পারেন। ৪০ মিনিট সময় লাগতে পারে রূপসা থেকে বাগেরহাটে যেতে।

কোথায় থাকবেনঃ

বাগেরহাট সদরে বিভিন্ন হোটেল ও সরকারি গেস্টহাউস আছে।

রেল রোডে অবস্থিত মমতাজ হোটেলে থাকতে পারেন। এই হোটেলটিতে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান মোটামোটি ভাল এবং খরচও একটু বেশি। এছাড়া এই হোটেলের আশেপাশে থাকার জন্য আরো কিছু হোটেল রয়েছে।

খান জাহান আলীর মাজারের সামনে মেইন হাইওয়েতে থাকতে পারবেন “হোটেল অভি”-তে । ভাড়া ৪০০ টাকা। ফোন: ০১৮৩৩৭৪২৬২৩।

বাগেরহাটে থাকার জন্য হোটেলের মধ্যে-

হোটেল আল আমিন কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন সংলগ্ন (০৪৬৮-৬৩১৬৮, ০১৭১৮৬৯২৭৩৭, ১ হাজার টাকায় এসি দ্বৈত কক্ষ এবং নন এসি কক্ষ ১০০ থেকে ৪০০ টাকায় পেয়ে যাবেন)

হোটেল মোহনা কর্মকার পট্টিতে (০৪৬৮-৬৩০৭৫, ০১৭২২৮৫৮৩১৩, নন এসি কক্ষ ১০০ থেকে ৪০০ টাকায়।

সময় কম লাগায় খুলনা থেকে বাগেরহাটে আসতে আপনারা চাইলে খুলনাতেও থাকতে পারেন।

Share this post