মহেশখালী স্বর্ণ মন্দির

মহেশখালী বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এই অঞ্চলটি কক্সবাজারের একটি বাটি অঞ্চল দ্বীপ রুপেও পরিবেশিত এবং এটি বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়িয়া দ্বীপ। এটি মহেশখালী দ্বীপ নামেও পরিচিত।

adinath Temple

মহেশখালী আদিনাথ মন্দির

লোককাহিনী অনুসারে মহেশখালীর মৈনাক পাহাড়ে শিবের আবির্ভাব ঘটে ত্রেতাযুগে। রাম-রাবনের যুদ্ধের সময় শিবের আশির্বাদ লাভের জন্য রাক্ষসরাজ রাবন কৈলাশে যান শিবকে আনার জন্য। দেবতাদের অনুরোধে শিব রাবনকে শর্ত দেন যে, বিরতিহীনভাবে নিয়ে যেতে পারলে শিব লংকায় যেতে রাজি আছেন। শর্ত মেনে শিবকে মাথায় নিয়ে রাবন যাত্রা শুরু করে। কিন্তু প্রস্রাবের জন্য মৈনাক পাহাড়ে রাবনের যাত্রাবিরতি ঘটে। এতে শর্তভঙ্গ হওয়ায় শিব, মৈনাক পাহাড়ে অবস্থান গ্রহণ করেন। লোককাহিনী মতে, একদিন স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে এক নাগা সন্ন্যাসীর সহায়তায় নেপাল থেকে পাথরের অষ্টভূজা দুর্গামূর্তি মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সমুদ্রের মধ্যে মৈনাক পর্বতের অবস্থান বলে রামায়নে উল্লেখ আছে। মহেশখালী দ্বীপ এবং সমুদ্রের মাঝখানে আদিনাথ পাহাড়টির নাম মৈনাক পাহাড়। আদিনাথ মন্দিরটি সমুদ্রস্তর থেকে ২৮৮ ফুট উঁচু মৈনাক পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত।

বৌদ্ধ ধর্মীয় প্যাগোডা

মহেশখালী বৌদ্ধ ধর্মীয় প্যাগোডা

মহেশখালী উপজেলার লোকসংস্কৃতি ও লোক উৎসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আদিনাথ মেলা। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের কোন একদিন থেকে শুরু হয়ে প্রায় দশ-পনের দিন পর্যন্ত চলে এই মেলা। মেলায় দেশীয় পণ্যের পসরা বসে। মাটির কিংবা বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসের মধ্যে হাঁড়ি পাতিল, কলসি, হাতা, ধুছনী, লোহার তৈরি দা-বটি ইত্যাদি পণ্য মেলাতে কেনাবেচা হয়। মেলা উপলক্ষে নাটক, যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

প্রখ্যাত ভারতীয় সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার কাকাবাবু সিরিজের জোজো অদৃশ্য উপন্যাসে মহেশখালীর বর্ণনা দিয়েছেন। সাইক্লোন ইত্যাদি থেকে বাঁচতে বিভিন্ন স্টর্ম সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে মহেশখালী সংলগ্ন এলাকায়।

মহেশখালী ব্রিজ

মহেশখালী ব্রিজ

মহেশখালী দ্বীপে যা যা দেখবেন

  • আদিনাথ মন্দির
  • বড় রাখাইন পাড়া বৌদ্ধ মন্দির
  • লিডারশীপ ইউনিভার্সিটি কলেজ
  • আদিনাথ ও গোরকঘাটা জেটি
  • লবণ মাঠ
  • শুটকি মহাল
  • গোরকঘাটা জমিদারবাড়ী
  • উপজেলা পরিষদ দীঘি
  • সোনাদিয়া দ্বীপ ও সমুদ্র সৈকত
  • হাঁসের চর
  • চরপাড়া সী-বিচ
  • মৈনাক পাহাড়
  • প্যারাবন
  • চিংড়ী ঘের
মহেশখালী মৈনাক পাহাড়

মহেশখালী মৈনাক পাহাড়

মহেশখালী যাওয়ার উপায়

মহেশখালী উপজেলার উত্তর দিক হতে ২টি পাকা সড়ক দক্ষিণে দিক পর্যন্ত রয়েছে। মহেশখালী মুল ভূখন্ডের সাথে বদরখালী ব্রীজ নির্মাণের ফলে সরাসরি যুক্ত হয়েছে। বদরখালী ব্রীজ হয়ে উপজেলা হেড কোয়ার্টার পর্যন্ত সড়কপথের দুরত্ব ২৫ কিলোমিটার। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৬৮টি সড়কের মোট দৈর্ঘ্য হচ্ছে ২৮২ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা সড়ক ৯১ কিলোমিটার এবং কাঁচা সড়ক ১৯১ কিলোমিটার। ফলে সড়কপথে বাংলাদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে মহেশখালীতে যাতায়াত সম্ভব। সড়কপথে জীপ, অটোরিক্সা, ট্রাক, টেম্পো চলাচল করে থাকে।

কক্সবাজার থেকে যেভাবে যাবেন মহেশখালী

কলাতলী থেকে বাকখালী ৬ নং ঘাটে অটো করে যেতে হবে। এখান থেকে যাত্রীবাজী ট্রলার, স্পীডবোট, নৌকা চলাচল করে থাকে। আপনারা মহেশখালী দ্বীপে যেতে উক্ত নৌযান ব্যবহার করতে পারবেন। মহেশখালী ঘাটে নেমে অটো করে আপনারা মহেশখালী দ্বীপটি ঘুরে দেখতে পারবেন। আপনাদের সুবিধার জন্য মহেশখালির একজন ভালো অটো-ওয়ালার নাম শাহাবুদ্দিন ও নাম্বার ০১৮১২৪৩৩৪৯৩।

Traller

জলপথের মধ্যে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ কক্সবাজার হতে মহেশখালী পর্যন্ত চ্যানেলটি উল্লেখযোগ্য। জলপথে স্পীডবোট, মালবাহী ট্রলার, যাত্রীবাহী লঞ্চ ও নৌকা চলাচল করে থাকে।

মহেশখালী ব্রিজ

মহেশখালী ঘাট ব্রিজের দুই পাশে রয়েছে বাইন গাছ

মহেশখালীর বিকাশমান শিল্প

পান, মাছ, শুটকি, চিংড়ি, লবণ এবং মুক্তার উৎপাদন মহেশখালী উপজেলাকে দিয়েছে আলাদা পরিচিতি। দ্বীপটি লবণ ও পান ব্যবসায়ের প্রধান কেন্দ্র। সামুদ্রিক মাছ ধরা, চিংড়ি চাষ করা এবং তা প্রক্রিয়াজাতকরণ এই দ্বীপের একটি বিকাশমান শিল্প। পান চাষ এখানকার ঐতিহ্যবাহী পেশা ও ব্যবসা। শুষ্ক মৌসুমে সামুদ্রিক শুঁটকির জন্য দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ীদের ভিড় জমতে দেখা যায় এই দ্বীপে। এছাড়া রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ বালি।

মহেশখালী ভ্রমণে সতর্কতা ও কিছু পরামর্শ

  • স্থানীয়দের সাথে বিনয়ী থাকুন।
  • স্পীডবোট বা ট্রলারে পানিপথ পাড়ি দিতে সতর্ক থাকুন।
  • কোন কিছু কেনার প্রয়োজন হলে দামা দামি করে ক্রয় করুন।
  • খরচ কমাতে দলগত ভাবে ভ্রমণ করুন।
  • স্বল্প খরচে জামেলামুক্ত সকল ধরণের ভ্রমণের জন্য, আমাদের ইভেন্টে যোগ দিতে পারেন নিশ্চিন্তে।
Share this post