কোদলা মঠ

কোদলা মঠ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত একটি মঠ। এই প্রত্নতাত্ত্বিক অবকাঠামোটি আনুমানিক সপ্তদশ শতাব্দীতে তৈরি করা হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়। এ মঠের নাম কোদলা মঠ হলেও স্থানীয়ভাবে অযোধ্যা মঠ নামেও পরিচিত। স্থানীয় ভাবে, বই পুস্তক ও বিভিন্ন লেখা প্রকাশনায় অযোধ্যার মঠ বা কোদলার মঠ দুটি নামই দেখা যায়।

কোদলা মঠ – বাগের হাট – Kodla Moth

মঠটি অবস্থিত কোদলা (অযোধ্যা) গ্রাম বারুইপাড়া ইউনিয়নের বাগের হাট জেলার সদর খুলনা বিভাগে। ৮ কিলোমিটার উত্তরে বাগেরহাট থেকে এবং প্রায় ৬ কিলোমিটার যাত্রাপুর বাজার থেকে পূর্ব দিকে ভৈরব নদীর পূর্বতীরে অবস্থিত। একটি লেখা রয়েছে মঠটিতে খোদাই করা। জানা যায় লেখাটি ছিল ‘শর্মনা উদ্দিশ্য তারকং(ব্রক্ষ্ম) [প্রশা] দোহাং বিনির্মিত স্থানীয় ইতিহাস গ্রন্থ থেকে।

সংক্ষিপ্ত ও খন্ডলিপিটির সঠিক অর্থ নিরুপন করা না গেলেও যতদূর পাঠোদ্বার করা যায় তা থেকে অনুমান করা হয় “তারকের (জনৈক ব্রাক্ষণ কার্তিক) প্রাসাদ বা অনুগ্রত লাভের জন্য এ মঠটি সম্ভবত একজন ব্রাহ্মণ (শর্মনা) কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। মঠের নির্মাণ নিয়ে যে সকল তথ্য জানা যায় এবং সবচেয়ে বেশি স্বীকৃত বারো ভুঁইয়ার অন্যতম রাজা প্রতাপাদিত্যের উদ্যেগে তার গুরু (সভাপন্ডিত) অবিলম্ব স্বরস্বতীর স্মতিস্তম্ভ হিসাবে মঠটি নির্মান করা হয়।

রাজা প্রতাপাদ্যিতের শাসনমাল থেকে জানা যায়, সে সময় সমগ্র বাগেরহাট প্রতাপাদিত্যের শাসনাধীন ছিল। বিশেষ করে প্রতাপাদিত্যের কাকা বসন্ত রায়ের মৃত্যুর (প্রতাপাদিত্য তার কাকাকে হত্যা করে) বলেশ্বর নদী পর্যন্ত শাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। প্রতাপাদিত্য কাকা, জামাইকে হত্যা চেষ্টা করার স্বত্বেও বহু পন্ডিতকে বৃত্তি দিতেন। সভাপন্ডিতদের মধ্যে অন্যতম প্রতাপাদিত্যর বন্ধুকবি অবিলম্ভ স্বরস্বতী। তিনি মুখে মুখে দ্রুত কবিতা রচনা করতে পারতেন বলে তার নাম অবিলম্ব স্বরস্বতী হয়েছিল।

kodla Moth

অলঙ্করণ করা কারুকাজ রয়েছে অযোধ্যা বা কোদলা মঠের চারপাশে। অযোধ্যা বা কোদলার মঠটি নির্মিত হয়েছে বর্গাকার চতুস্কোণ বিশিষ্ট ভিতের উপর। যার উচ্চতা আনুমানিক ধরা হয় ১৮.২৯ মিটার। ৩.১৭ মিটার পুরুত্ব প্রাচীরগুলি চিকন ইটের তৈরি। ভেতরের প্রত্যেক দেয়াল বর্গাকার, দৈর্ঘ্য ২.৬১ মিটার। দেয়ালের ইট লাল পালিশ করা। অযোধ্যা বা কোদলার মঠের প্রবেশ পথ ৩টি। পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণে এ প্রবেশ পথগুলি। ধারণা করা হয় দক্ষিণ দিকের পথটি মূল প্রবেশ পথ। দক্ষিণ দিকের প্রবেশ পথের উপরে আদি বাংলায় মঠটির সম্পর্কে খোদাই করা রয়েছে।

যে ‘রেখা’ নমুনার মন্দির নির্মাণ পদ্ধতি উড়িষ্যা অঞ্চলে খ্রীষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত দেখা যায় তার প্রভাব এ মঠে আছে বলে ধারণা করা হয়। কোন দেব মন্দির নয় অযোধ্যার মঠ বা কোদলার মঠ, সম্ভবত: মৃত: মহাত্মার সমাধি স্তম্ভ। মঠের বাইরের দিকের প্রত্যেক পার্শ্ব দেয়াল বহুভূজ এবং পাঁচটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে। বাইরের দিকের সম্মুখ ভাগের প্রত্যেক অংশে ছয়টি সমতল এবং এগারোটি কুলুঙ্গি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে বহুভূজ আকৃতির এই পাঁচটি কুলুঙ্গি।

বাইরের দেয়ালের ডিজাইনে নিচ থেকে উপরের দিকে ক্রমান্বয়ে চক্রাকারে বলয় তৈরি করে উঁচুতে সরল অনুভূমিক রেখা সৃষ্টি করে উঠে গিয়েছে। মন্দিরের মত প্রধান আকর্ষণীয় স্থান কোদলা মঠের বহির্ভাগের এ অলংকরণই। কোদলা মঠকে শিখর স্টাইলের সঙ্গে অঙ্গীভূত করেছে পিরামিডের অনুরূপ উঁচু স্থাপত্যিক গঠন। মঠের ভেতরের অংশে ১২/১৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা গুম্বুজ  ফাঁকা তলদেশর আকারে উপরে উঠে গিয়ে শেষ হয়েছে। অনেকে ধারণা করেন এর উপরেও মঠের অভ্যন্তরে শূন্য/ফাপা আছে।

কিভাবে যাবে

ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে বাসে সরাসরি বাগেরহাট যাওয়া যায়। এছাড় কমলাপুর থেকে ট্রেনে খুলনা হয়ে বাগেরহাট যাওয়া যায়। অপরদিকে সদরঘাট থেকে ষ্টিমারে মোড়েলগঞ্জে নেমে সেখান থেকে বাগেরহাটের কোদলা মঠ চলে যেতে পারেন।

গাবতলী থেকে সোহাগ (০১৭১৮৬৭৯৩০২), শাকুরা (০১৭১১০১০৪৫০), হানিফ ও ইগল পরিবহন ছেড়ে যায়। ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। যাতায়াতে সময় লাগে প্রায় ৭ ঘন্টা।

ঢাকার সায়দাবাদ থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এবং সন্ধা ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত অনেকগুলা গাড়ী ছেড়ে যায়। – মেঘনা (০১৭১৭১৭৩৮৮৫৫৩), পর্যটক (০১৭১১১৩১০৭৮), বনফূল, ফাল্গুনী, আরা, বলেশ্বর, হামিম ও দোলা।

সুন্দরবন এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনে খুলনা গিয়ে এরপর বাস ধরে বাগেরহাটে যেতে পারেন। রূপসা থেকে বাগেরহাটের দূরত্ব প্রায় ৪০ মিনিটের।

কোথায় থাকবেন

বাগেরহাট সদরে বিভিন্ন হোটেল ও সরকারি গেস্টহাউস আছে।

রেল রোডে অবস্থিত মমতাজ হোটেলে থাকতে পারেন। এই হোটেলটিতে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান মোটামোটি ভাল এবং খরচও একটু বেশি। এছাড়া এই হোটেলের আশেপাশে থাকার জন্য আরো কিছু হোটেল রয়েছে।

খান জাহান আলীর মাজারের সামনে মেইন হাইওয়েতে থাকতে পারবেন “হোটেল অভি”-তে । ভাড়া ৪০০ টাকা। ফোন: ০১৮৩৩৭৪২৬২৩।

বাগেরহাটে থাকার জন্য হোটেলের মধ্যে-

হোটেল আল আমিন কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন সংলগ্ন (০৪৬৮-৬৩১৬৮, ০১৭১৮৬৯২৭৩৭, ১ হাজার টাকায় এসি দ্বৈত কক্ষ, ১০০ থেকে ৪০০ টাকা নন এসি কক্ষ।

হোটেল মোহনা কর্মকার পট্টিতে (০৪৬৮-৬৩০৭৫, ০১৭২২৮৫৮৩১৩, নন এসি কক্ষ ১০০ থেকে ৪০০ টাকায় পাবেন।

১ ঘণ্টা সময় লাগে খুলনা থেকে বাগেরহাটে আসতে তাই খুলনাতেও থাকা যায়।

Share this post