Nikli Haor

বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত নিকলী ও মিঠামইন উপজেলাতে অবস্থিত হওয়ায় এই জেলার নাম অনুসারে নিকলী হাওর ( Nikli Haor ) ও মিঠামইন হাওর (Mithamain Haor) নাম করণ করা হয়। দেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ কিশোরগঞ্জের নিকলী মিঠামইনে বর্ষা মৌসুমে হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য পর্যটকরা ভিড় করেন প্রতিদিন।চারদিকে নীল পানি আর অপরূপ দৃশ্যে ঘেরা হাওর।

হাওর এলাকার একটি জনপ্রিয় প্রবাদ রয়েছে, ‘বর্ষাকলে নাউ শুকনাকালে পাও’ অর্থাৎ বর্ষাকালে নৌকায় আর শুকনো মৌসুমে পায়ে হেটে চলা। তবে এখন নিকলী হাওর ( Nikli Haor ) এলাকায় সারাবছর চলাচল করার জন্য তৈরি করা হয়েছে উঁচু পাকা সড়ক। যা স্থানীয়দের মধ্যে যুগ যুগ ধরে চলা প্রবাদকে হাওরের জলে ডুবিয়ে দিয়েছে।

Nikli Haor – নিকলী হাওর

১২২টি হাওরের দেশ কিশোরগঞ্জে

শুষ্ক মৌসুমে যতদূর চোখ যায় শুধুই ফসলি জমি আর ধূলিওড়া মেঠোপথ।  আর বর্ষায় নীল জলরাশি ডুবিয়ে দেয় দিগন্ত সীমার সবটুকু। এরই মাঝে জেগে থাকা ৩৫ কিলোমিটার পিচঢালা অলওয়েদার রোড হাওরের বুক চিরে দুভাগ করে এগিয়ে যায়। সড়কটি মিঠামইনের সঙ্গে বন্ধন তৈরি করে দেয় ইটনা ও অষ্টগ্রামের। 

এদিকে হাওরের উত্তাল ঢেউয়ের দোল খেতে নৌকায় চড়তে তো হবে অবশ্যই।  তখনই চোখে পড়বে দূরের জমাট কচুরিপানা। পরে ভুল ভাঙবে। একেকটি কচুরিপানার স্তুপ তো একেকটি গ্রাম। এসব গ্রামবাসীর গর্ব এখন তাদের তিন উপজেলার মধ্যে সেতুবন্ধন এই সংযোগ সড়ক । যেখানে ভ্রমণে প্রতিদিনই ভিড় করেন হাজারো পর্যটক। কিশোরগঞ্জের বুকে পিচঢালা পথে রূপকথার গল্প বুনে পর্যটকরা।

সড়কটি পর্যটকদের কাছে ভ্রমণ-বিলাসের উপকরণ মনে হলেও স্থানীয়দের জন্য আর্শীবাদ ও হাওরের প্রাণভোমরায় পরিণত হয়েছে। 

বলছিলাম হাওর-বাওরের দেশ কিশোরগঞ্জের কথা। সেখানের নিকলী হাওর আর মিঠামইনের জলের বুক চিরে চলে যাওয়া মসৃণ  সড়কের কথা।

২০১৯ অর্থবছরে ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।  এতে ব্যয় হয় এক হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। যার নামকরন করা হয়েছে ‘’অল ওয়েদার রোড’’
এই সড়কে ভ্রমণ বিলাসে মেতেছেন পর্যটকরা। ইতিমধ্যে ড্রোন প্রযুক্তির সহায়তায় পাখির চোখে সেই সড়ককে দেখেছে ভ্রমণপিপাসুরা। যেন উত্তাল জলের ওপর দিয়ে কালো মসৃণ কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে কেউ।

সড়কটি কিশোরগঞ্জের তিন হাওর উপজেলা ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রামকে এক করেছে। সারা বছরজুড়েই এ রাস্তায় চলাচল করা যাচ্ছে। রাস্তাটি হাওরের চেহারাই বদলে দিয়েছে। এটিই এখন পর্যটকদের মূল আকর্ষণ।  

ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম

ইটনা মিঠামইন অষ্টগ্রাম সড়ক অবস্থান

কিশোরগঞ্জের হাওর সমৃদ্ধ তিন উপজেলা ইটনা, মিঠামইন অষ্টগ্রামের মানুষদের সারা বছর সড়ক পথে চলাচল করার জন্য ৪৭ কিলোমিটার উঁচু পাকা সড়ক ও ৩৫ কিলোমিটার সাব-মার্সিবল সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এটিই ইটনা মিঠামইন অষ্টগ্রাম সড়ক নামে পরিচিত।

অষ্টগ্রাম সড়ক

সেতু ও কালভার্ট

সড়ক পথে ২২ টি পাকা সেতু রয়েছে ইটনা মিঠামইন অষ্টগ্রাম সড়কে ও ১০৪ টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ৫ টি ফেরি বিভিন্ন নদীতে চালু করা হয়েছে।

অষ্টগ্রাম সড়ক

নিকলী হাওর ভ্রমণের সেরা সময়

মিঠামইন হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর বর্ষাকাল। যদিও শুকনা মৌসুমের হাওরের সৌন্দর্য্য অন্য রকমের সুন্দর। তাই সড়ক পথে ভ্রমণ করে শীত বা গ্রীষ্ম যেকোন সময় হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য দেখা যাবে।

সবুজে ঘেরা হাওর

নিকলী হাওর যাওয়ার উপায়

বাস গাড়ী

অনন্যা পরিবহনের বাস ঢাকার মহাখালী থেকে ছেড়ে যায় ৫ মিনিট পর পর, ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা।

যারা সায়েদাবাদ থেকে যেতে চান তাঁরা অনন্যা সুপার বাস পাবেন।

সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টায় কিশোরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড পৌছে যাওয়া যাবে। বাস স্ট্যান্ড থেকে ১০ টাকা দিয়ে ইজি বাইকে চলে যেতে পারবেন স্টেশন রোড।

ট্রেন

ট্রেনে যেতে চাইলে এগারসিন্দুর প্রভাতী বা কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ধরতে হবে। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৭ঃ১৫ টায় ঢাকা থেকে এগারসিন্ধুর প্রভাতি ছেড়ে যায় কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে। ভাড়া টিকেটের শ্রেণীভেদে ১২০-২৮০ টাকা।

নিকলী হাওর ভ্রমণের জন্য ট্রেনে কিশোরগঞ্জ স্টেশনের পূর্বে গচিহাটা নেমে ইজিবাইকে যাওয়া যাবে। ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম হাওর ভ্রমণের জন্য যেতে হবে কিশোরগঞ্জ।

স্টেশন রোড থেকে চামড়া বন্দর হয়ে যাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।চামড়া বন্দর থেকে ৪০ টাকায় সি.এন.জি অটোতে চামড়া বন্দর, সময় লাগবে প্রায় ঘন্টাখানেক। এই চামড়া বন্দরকে কিশোরগঞ্জের ভাটি অঞ্চলের অন্যতম হাব বলা যায়। ইটনা, মিঠামইন, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী ইত্যাদি অঞ্চলের নৌযানগুলো এই বন্দর থেকেই ছাড়ে।

চামড়া ঘাট থেকে মিঠামইনের উদ্দেশ্যে ট্রলার ছাড়ে ১ ঘন্টা পর পর বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। ভাড়া ৫০-৭০ টাকা। ঘন্টা দেড়েক সময় লাগবে বড় ট্রলারে মিঠামইন যেতে। আপনারা চাইলে ১টা ট্রলার ভাড়া করে বালুখালী, হাশেমপুর ব্রীজ এবং আশে পাশের হাওড়ে ঘোরা শেষ করে তারপর মিঠামইন যেতে পারেন। এছাড়া চাইলে চামড়া বন্দর থেকে ইটনায় গিয়ে ঘুরে এসে বিকেল বেলা নৌকা ভাড়া করে মিঠামইন ঘুরে আসতে পারেন।

ইটনা সড়ক ব্রিজ

কোথায় খাবেন

মিঠামইন, অষ্টগ্রাম বাজারে মোটামুটি মানের খাবার হোটেল রয়েছে যেখানে খেতে পারবেন হাওরের তাজা মাছ, গরু ও মুরগির গোশত ইত্যাদি সব খাবারই পাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন

রাতে থাকতে চাইলে মিঠামইন ঘাটে নেমে চলে যান জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজে। ভাড়া পড়বে ১০০-২০০ টাকা। কেয়ার টেকার শফিকুল ০১৯৩৯৮২৭৩৪০ ও শহিদুল ০১৯৩৫৬২৬৮৫২।

১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত থানা ইটনা ঘুরে আসুন ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে বিকেলে বাজার ঘাটে এসে ৭-৮ শ টাকায় নৌকা ভাড়া করে।

এছাড়া কিশোরগঞ্জে অনেকগুলি হোটেল রয়েছে। যেমন রিভার ভিউ, ক্যাসেল সালাম, আল মোবারক, গাঙচিল ইত্যাদি।

ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম

নিকলী হাওর এর আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম সড়কের আশেপাশে আছে বেশ কিছু হাওড়। সবগুলো হাওড় দেখার মতো সৌন্দর্যে ভরপুর। তবে তার মধ্যে অন্যতম হলো

  • মিঠামইন হাওর
  • অষ্টগ্রাম হাওর
  • নিকলী হাওর
  • রাস্ট্রপতির বাড়ী
  • ঈশা খাঁ বাংলার বারো ভুঁইয়া বা প্রতাপশালী বারোজন জমিদারদের প্রধান। কিশোরগঞ্জ থেকে ১০/১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
  • এগারোসিন্ধু
  • সত্যজিৎ রায়ের বাড়ী
  • দিল্লীর আখড়া

২/৩ দিন সময় নিয়ে বের হওয়াই উত্তম উপরের জায়গাগুলোর সৌন্দর্য সম্পূর্নরুপে উপভোগ করতে হলে।

হাওরে ঘুরতে কিছু সতর্কতা

  • বিশাল হাওরের অনেক জায়গায় বেশ গভীর। তাই সাঁতার না জানলে পানিতে না নামাই ভালো।
  • লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখুন।
  • নৌকা দরদাম করে ভাড়া করবেন।
  • নৌকায় উঠে লাফালাফি করবেন না ও অতিরিক্ত লোক উঠবেন না।
  • মোটর সাইকেলে ভ্রমণ করলে সাবধানে চালাবেন।

অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

১. টাঙ্গুয়ার হাওর

Share this post