সেন্টমার্টিন ( Saint Martin Bangladesh ) বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ যা মূলভূখন্ডের সর্ব দক্ষিণে এবং কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে ১৭ বর্গ কিলোমিটারের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ খরচ সম্পূর্ণ আপনার নিজের উপর নির্ভর করবে। তবে সর্বনিম্ন ৬৫০০ টাকায় ও ঘুরে আসতে পারবেন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ
Saint Martin Island Best Place for Sea Beach & Island Lover
সেন্টমার্টিন দ্বীপ এর স্থানীয় নাম কি ?
স্থানীয় ভাষায় এই দ্বীপের স্থানীয় নাম নারিকেল জিঞ্জিরা। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। নীল আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল জলের মিতালী, সারি সারি নারিকেল গাছ এ দ্বীপকে করেছে অনন্য।
সেন্টমার্টিন কোথায় অবস্থিত ?
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের একটি ইউনিয়ন। এই ইউনিয়ন কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত উপজেলা টেকনাফের একটি ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নেই সেন্টমার্টিন দ্বীপ অবস্থিত।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের নামকরণ
জানা যায়নি দ্বীপটিকে মানুষ কখন শনাক্ত করেছিল। সেন্টমার্টিন দ্বীপের পুরাতন নাম কি ? এই দ্বীপের নামকরণ প্রথম করা হয় জিঞ্জিরা। আর এই নামটি রেখেছিলেন কিছু আরব বণিক যারা চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যাতায়াতের সময় এই দ্বীপটিতে বিশ্রাম নিতেন। সময়ের বিবর্তনে চট্টগ্রাম ও চট্রগ্রামের আশেপাশের মানুষ এই দ্বীপটিকে জিঞ্জিরা নামেই চিনতে থাকে। ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে কিছু মৎস্যজীবি বাঙালি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ এই দ্বীপে বসতি স্থাপন করে।
জানা যায়, ১৩ টি পরিবার বসতি স্থাপন করতে প্রথম অধিবাসী হিসাবে আসেন। যারা বেছে নিয়েছিল দ্বীপের উত্তরাংশ। কালক্রমে উক্ত দ্বীপটি বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত হয়। পূর্বে থেকেই এই দ্বীপে কেয়া এবং ঝাউগাছ ছিল। সম্ভবত বাঙালি জেলেরা জলকষ্ঠ এবং ক্লান্তি দূরীকরণের অবলম্বন হিসাবে প্রচুর পরিমাণ নারকেল গাছ এই দ্বীপে রোপণ করেছিল। ধীরে ধীরে পুরো দ্বীপটি একসময় ‘নারকেল গাছ প্রধান’ দ্বীপে পরিণত হয়। এই কারণেই স্থানীয় অধিবাসীরা এই দ্বীপের উত্তরাংশকে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে অভিহিত করা শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে এই অঞ্চলের বাইরের মানুষের কাছে, দ্বীপটি সেন্টমার্টিন নামেই পরিচিত লাভ করে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভিডিও
দ্বীপটি প্রধানত সমতল ভূপ্রকৃতি, তবে কিছু কিছু বালিয়াড়ি দেখা যায় এবং দ্বীপটির প্রধান গঠন উপাদান চুনাপাথর। দ্বীপটির উত্তর এবং দক্ষিণ পাড়া দু’জায়গারই প্রায় মাঝখানে মিঠা পানি সমৃদ্ধ জলাভূমি আছে যা ফসল উৎপাদনে সহায়ক। এই দ্বীপে কিছু কৃষি উৎপাদন হয়ে থাকে যা কিনা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ কেন বিখ্যাত
এই দ্বীপে প্রায় ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, চার প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে পেজালা নামে পরিচিত Sea weeds বা অ্যালগি (Algae) এক ধরণের সামুদ্রিক শৈবাল প্রচুর পাওয়া যায়। এগুলো বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে তবে লাল অ্যালগি (Red Algae) বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়াও রয়েছে ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। অমেরুদন্ডী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে স্পঞ্জ, শিল কাঁকড়া, সন্যাসী শিল কাঁকড়া, লবস্টার ইত্যাদি। মাছের মধ্যে রয়েছে পরী মাছ, প্রজাপতি মাছ, বোল করাল,রাঙ্গা কই, সুঁই মাছ, লাল মাছ ইত্যাদি। সামুদ্রিক কচ্ছপ মানে সবুজ সাগর কাছিম এবং জলপাইরঙা সাগর কাছিম এই প্রজাতির কচ্ছপের ডিম পাড়ার স্থান হিসেবে সেন্টমার্টিন জায়গাটি খ্যাত।
দ্বীপটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন মৌসুমে এখানে প্রতিদিন ৫টি লঞ্চ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড হতে আসা যাওয়া করে। এখানে বর্তমানে বেশ কয়েকটি ভালো আবাসিক হোটেল রয়েছে। একটি সরকারি ডাকবাংলো আছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান
১. জেটি ঘাট
২. পশ্চিম বিচ
৩. হুমায়ূন আহমেদের কটেজ
৪. ছেঁড়া দ্বীপ
সেন্টমার্টিন ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
সধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এই ৫ মাস জাহাজ চলে। এই ৫ মাস ছাড়া অন্য যেকোন সময়ে গেলে ট্রলার বা স্পিডবোট দিয়ে যেতে হবে। শীত মৌসূমে সাগর শান্ত থাকে বাকি সময় সাগর উত্তাল থাকে, তাই শীতের সময়ে ভ্রমণ নিরাপদ বাকি সময়ে নিরাপদ নয়।
কিভাবে যাবেন :
সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে কক্সবাজার জেলা অথবা কক্সবাজার জেলার টেকনাফে আসতে হবে।
বাস গাড়ীতে
ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফে বাসে করে যাওয়া যায়। ঢাকার সায়েদাবাদ ও ফকিরাপুল থেকে শ্যামলী, ঈগল, সেন্টমার্টিন পরিবহন, এস আলম, গ্রীন লাইন, মডার্ন লাইন ইত্যাদি বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। এই ভ্রমণে সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা বাস ভাড়া ক্লাস অনুযায়ী সাধারণত ৯০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
ঢাকা থেকে প্রথমে কক্সবাজার এসে তারপর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়া যাবে। ঢাকা থেকে প্রতিদিনই গ্রীন লাইন, সোহাগ, টিআর ট্রাভেলস, শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, ঈগল, এস আলম, সিল্ক লাইন, সেন্টমার্টিন ইত্যাদি অনেক বাস কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে, বাস ভেদে ভাড়া সাধারণত ৯০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে।
বিমানে কক্সবাজার
এছাড়াও ঢাকা থেকে বিমানে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়। যারা বিমানে যেতে চান তাদেরকে ওয়ান ওয়ে ভাড়া গুনতে হবে ৪০০০-৫০০০ টাকা। রিটার্ণ ভাড়া ৮,০০০- ১০,০০০ টাকা। ইউএস বাংলা, বাংলাদেশ বিমান ও নোভো এয়ার বিমানে করে যেতে পারবেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।
ট্রেনে
ট্রেনে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে হলে তবে ঢাকা থেকে সোনার বাংলা, তূর্ণা-নিশীথা, সুবর্ন এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী, চট্রগ্রাম মেইলে ট্রেন থেকে নিজের সুবিধামত যাত্রা করতে হবে। তারপর চট্টগ্রামের বহদ্দার হাট কিংবা নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে প্রতি ঘণ্টায় কক্সবাজারের গাড়ি পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ভালো সার্ভিস পেতে এস আলম, সৌদিয়া, ইউনিক ইত্যাদি বাসে যাওয়া যাবে।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার জন্য লোকাল বাস অথবা মাইক্রো/জিপ ভাড়া নিতে পারেন। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে প্রায় ১ থেকে ২ ঘন্টা সময় লেগে থাকে।
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়ঃ
টেকনাফ থেকে সেইন্টমার্টিনে প্রতিদিন সকাল থেকে আসা-যাওয়া করে কুতুবদিয়া, কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল, সুন্দরবন ইত্যাদি জাহাজ। এছাড়াও এই সমুদ্র রুটে বেশ কিছু ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করে। জাহাজে করে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘণ্টা। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজ ভাড়া শ্রেনীভেদে আপ-ডাউন ভাড়া ৫৫০-৮০০ টাকার মত। জেটি ঘাট থেকে প্রতিদিন জাহাজগুলো সকাল ৯.০০-৯.৩০ মিনিটে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং ফেরত আসে বিকাল ৩.০০-৩.৩০ মিনিটে। তাই সময়ের আগে জেটি ঘাটে উপস্থিত না হতে পারলে জাহাজ মিস হবার সম্ভাবনা আছে। আর এমন ক্ষেত্রে ট্রলারে করে ফেরা ছাড়া উপায় নেই যা বিপদজনক। রাত্রি যাপন করে পরের দিন একটা জাহাজে ফেরার সুযোগ পাওয়া যায় যা পূর্বেই টিকিটে উল্লেখ থাকে।
সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে সতর্কতা:
সমুদ্রে নামার আগে অবশ্যই জোয়ার-ভাটার সময় জেনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নামতে হবে। যেকোন সমুদ্র সৈকতে নামার সময়ে ও জোয়ার-ভাটার সময় জেনে নামা উচিত। কিভাবে বুঝবেন কখন জোয়ার বা কখন ভাটার সময়, বিচের বিভিন্ন স্থানে এ সম্পর্কিত ইয়াছির লাইফ গার্ডের বেশ কয়েকটি সাইনবোর্ড ও পতাকা দেখতে পাবেন।
জোয়ারের সময় সবুজ পতাকা ওড়ানো হয় কারণ এই সময়ে সমুদ্রে গোসলে নামা নিরাপদ, তাই সবুজ পতাকা দেখে গোসলে নামা উচিত।
ভাটার সময়ে সমুদ্রে গোসলে নামা বিপদজনক কারন ভাটার টানে মুহূর্তেই হারিয়ে যেতে পারে যে কেউ। তাই এ সময় বিচ এলাকায় ওড়ানো হয় লাল পতাকা যাতে লেখা থাকে ভাটার সময়। তাই এই সময়ে বীচে না নামাই ভালো আর নামলে লাইফ গার্ডের সহায়তা নিয়ে নামুন এবং নেমে কোনোভাবেই বেশি দূরে যাবেন না।